এক বছরে দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বেড়েছে ২২.৩ শতাংশ
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার গত এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৯৭ লাখ বেড়েছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডেটা রির্পোটালের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশে সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২৯ লাখে পৌঁছেছে। এই তথ্য বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। তবে পূর্ববর্তী বছরের তথ্যের সঙ্গে সরাসরি তুলনা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এবার ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেছে। তবে এই সংখ্যা কোনো একক ব্যবহারকারীকে নির্দেশ করে না, কারণ একটি ব্যক্তির একাধিক প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। এই তথ্য দেশের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তৃত ব্যবহারকে তুলে ধরলেও এতে ব্যবহারকারীদের কার্যকলাপ বা সক্রিয়তার স্তরের পার্থক্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বয়স নির্বিশেষে ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ অন্তত একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্গবৈষম্য দেখা যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং শুধু ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী। এই অসমতা সব প্রধান প্রধান প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়।
বাংলাদেশে এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে রয়েছে ফেসবুক। মেটার বিজ্ঞাপন তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২৯ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৩০ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। এই সংখ্যা বাংলাদেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশকেও প্রতিনিধিত্ব করে। এই পরিসংখ্যান দেশে ফেসবুকের ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে।
গত এক বছরে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি এর মধ্যে প্ল্যাটফর্মটির বিজ্ঞাপন ৯৭ লাখ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছেছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুকের বিজ্ঞাপন দর্শকের সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিজ্ঞাপনের দর্শক ৫২ লাখ কমেছে। তবে এই বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর সংখ্যা সক্রিয় ব্যবহারকারীর তথ্যের সমতুল্য নয় এবং বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর পরিবর্তনগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততার পরিবর্তনকে প্রতিফলিত নাও করতে পারে।
২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের ‘যোগ্য’ জনসংখ্যার (১৩ বছর এবং তার ওপরের বয়সীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা যায়) ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকার করে। ফেসবুকের ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
বাংলাদেশে ইউটিউবও খুব জনপ্রিয় গুগলের বিজ্ঞাপন তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে ইউটিউবের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের শুরু থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মটির বিজ্ঞাপন দর্শক ৮ লাখ কমেছে। তবে অক্টোবর ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত এটি স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশে ইউটিউবের দর্শকদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
বাংলাদেশে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অনেক বেশি। টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুতে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার। এই সংখ্যা প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ১ শতাংশ এবং স্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো টিকটকের ব্যবহারকারীর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো বাংলাদেশে ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার কম হলেও গত বছর থেকে এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। মেটা বিজ্ঞাপন টুল অনুসারে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো এই প্ল্যাটফর্মেও পুরুষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। ইনস্টাগ্রামে মোট ব্যবহারকারীর ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ।
বাংলাদেশে লিংকডইন, ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং এক্স (সাবেক টুইটার) উল্লেখযোগ্য ব্যবহারকারী সংখ্যা রয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে লিংকডইনে ৮০ লাখ নিবন্ধিত সদস্য দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪.৬ শতাংশ। লিংকডইন ব্যবহারকারীদের ৭০ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
ফেসবুক মেসেঞ্জারের ২ কোটি ৮৩ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
গত এক বছরে এক্স প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দর্শক বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ লাখ ৪২ হাজার বেড়েছে। তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে।