দুই দিনেই বাজার মূলধন কমল সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারেও প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। আর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের ঘোষিত মানববন্ধন কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছেন তারা। তবে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঘোষণায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। এখন তারা বিএসইসিকে বাজার সংস্কারে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজার স্থিতিশীলতার জন্য সংস্থাটির কাছে চাওয়া হয়েছে ‘রোডম্যাপ’। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল পুঁজিবাজার সংস্কারে সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিএসইসি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধারাবাহিক দরপতনে ফুঁসে ওঠা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ গতকালও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এদিন তারা বিএসইসিকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। এ জন্য তারা আগামী রোববার পর্যন্ত সংস্থাটিকে হোমওয়ার্ক করার জন্য সময় দিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে বিএসইসিকে বাজার স্থিতিশীলতায় স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে তা বিনিয়োগকারীদের কাছে জানাতে বলা হয়েছে। রোববারের মধ্যে বিএসইসি ‘রোডম্যাপ’ না দিলে আগামী সোমবার কমিশন ভবনের সামনে বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মোহাম্মদ মুন্না বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিএসইসির দিকে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই। তবে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি থেকে আমরা সরে আসিনি। এ দাবিতে অনড় রয়েছি। এ মুহূর্তে আমরা বাজার স্থিতিশীলতায় বিএসইসির কাছে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ‘রোডম্যাপ’ চাচ্ছি। এ জন্য বিএসইসিকে হোমওয়ার্ক করার জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় দিতে চাই।’
মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আগামী রোববারের মধ্যে বিএসইসির কাছে বাজার স্থিতিশীলতায় ‘রোডম্যাপ’ চাওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে তারা (বিএসইসি) গ্রহণযোগ্য ‘রোডম্যাপ’ দিতে ব্যর্থ হলে আগামী সোমবার মতিঝিল থেকে দলে দলে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি ভবনের সামনে জড়ো হবেন। তারা (বিনিয়োগকারীরা) আন্দোলনের মাধ্যমে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নিশ্চিত করবেন।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেওয়া সিকিউরিটিজগুলোর বেশির ভাগ দর হারিয়েছে। মাত্র ৫৩ প্রতিষ্ঠানের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৮৮টি সিকিউরিটিজের দর। আর ৫৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল। এতে এক্সচেঞ্জটির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৪৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটির অন্যান্য সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ২ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৯৪২ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে মাত্র ৩৬৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এক দিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসে এ মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
একদিকে ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো বাজার মূলধন হাজার হাজার হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফুঁসে উঠছেন বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। এতে একপ্রকার কঠিন সময় পার করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান গতকাল বিএসইসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একটি স্বচ্ছ, গতিশীল, বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীবান্ধব পুঁজিবাজার তৈরি করতে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও আলোচনা করে যাচ্ছে। এমন উদ্বিগ্ন, উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে গতকাল সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে বাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।
বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের ১৭টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পরে আরও কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যপরিধি বাড়াতে পারবে বিএসইসি। টাস্কফোর্সকে তাদের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে যৌক্তিক সময়ে টাস্কফোর্স তাদের সুপারিশ বিএসইসিতে জমা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএসইসি।