ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:১৩

অব্যাহত দরপতনে ফুঁসে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
অব্যাহত দরপতনে ফুঁসে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা
বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান কর্মসূচি

অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে বুধবার। অব্যাহত এই দরপতনে হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী (আনরিয়েলাইজড) লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অদক্ষ নেতৃত্বের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছে তারা। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা চেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে বিনিয়োগকারীদের ব্যানারে কয়েকটি সংগঠন।

সরজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। এতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করার সুপারিশ জানায়। আর দুপুর তিনটার দিকে মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারের সামনে সমবেত হয়ে ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে অপর আরেক দল বিনিয়োগকারী। এতে তারা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ও অদক্ষ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি জানানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনার কামনা করেন। এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে কমিশনের গেটে তালা ঝুলানোর হুঁশিয়ারিও দেয় তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩০ পয়েন্টের ওপরে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।

বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে গত মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই কোনো একক শেয়ারে কারসাজির অপরাধে বড় জরিমানা ছিল। এই জরিমানার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেন শুরু হওয়ার আগেও বিষয়টি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এতে লেনদেনের শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার বড় দরপতনের মধ্যেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনশেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মানববন্ধনের বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, তা হলো বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। একই সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ বাদ দিয়ে একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আর সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’

‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয় মিন্টু নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের কোনো অর্জন নেই। তিনি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেও ছিলেন না। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি ছিলেন। সেখান থেকেও তার চাকরি চলে গেছে অদক্ষতার কারণে। উনার মতো লোককে কীভাবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান করা হয়?’

খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগকারীদের মারার জন্য যা করার দরকার, ঠিক তা-ই করা হচ্ছে। তিনি (খন্দকার রাশেদ মাকসুদ) চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা যত মূলধন হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা জানাতে হবে।’

এদিকে বুধবার প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ঢালাও দরপতন হলেও এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী আঁশ, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম এবং ইবনে সিনা।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

উপরে