বিতর্কের মুখে ৫ কোটি টাকায় ট্রেক বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল ডিএসইর পর্ষদ
অবশেষে বিতর্কের মুখে ৫ কোটি টাকা নিবন্ধন ফিতে ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। বুধবার (০৮ জুলাই) স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে গত ২ জুলাই ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ট্রেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে ২ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি ঠিক করা হয়েছিল। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন সভায় অংশ গ্রহণ করা ৩ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের মধ্যে শাকিল রিজভী এবং মোহাম্মদ শাহজাহান।
এ বিষয়ে পরের দিন (৩ জুলাই) বিজনেস আওয়ারে ‘এবারও ট্রেক ফি নিয়ে ডিএসইর পর্ষদে বিভক্তি’ শীর্ষক শিরোনামে নিউজ প্রকাশ করা হয়। যা নিয়ে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে সাড়া পড়ে এবং পর্ষদ সমালোচনার মুখে পড়ে। যে কারনে আজকের সভায় ট্রেক নিবন্ধন ফি ২ কোটি টাকা অনুমোদনের জন্য তোলা হলেও পাশ হয়নি। বরং ওই ২ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের দাবির ৫ কোটি টাকাই সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত করেছে ডিএসইর পর্ষদ।
জানা গেছে, আজকের পর্ষদ সভায় এক স্বতন্ত্র পরিচালক বলেন, গত ২ জুলাই বোর্ড সভার দিন রাতে একটি অনলাইনে ট্রেক ইস্যু নিয়ে একটি রিপোর্ট দেখি। পরের দিন সকালে পর্ষদের বিভক্তি নিয়ে আরেকটি রিপোর্ট দেখি। যে নিউজে আমাদের একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের বক্তব্যও ছিল। আমরা ওইদিন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২ কোটি টাকা ঠিক করলেও নিউজে বিভক্তির বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে ডিএসই সর্ম্পক্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খারাপ ধারনা জন্ম দেয়। তাই আগামিতে কেউ মিডিয়ায় বক্তব্য না দেওয়াই ভালো হবে। যা বলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলবেন।
৬ দিন আগে ট্রেক নিবন্ধন ফি ২ কোটি টাকা ঠিক করলেও আজ নানা চাপে ৫ কোটিতে ফিরতে বাধ্য হয়েছে ডিএসইর পুরো পর্ষদ। তবে ৫ কোটিতে ফেরার কারন হিসেবে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের দূর্ঘটনাকে দেখিয়েছেন পর্ষদের কেউ কেউ। যদিও ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক আরও আগে ২৩ জুন থেকে লাপাত্তা।
এদিন ট্রেক নিবন্ধন ফি ৫ কোটিতে উন্নিত করার পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জে জামানত রাখার পরিমাণ ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ট্রেক পেতে আবেদন ফি ১০ লাখ টাকা ও পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকাই রাখা হয়েছে।
তবে ডিএসইর বর্তমান ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে প্রায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। তাই নতুন ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি বা যে পরিমাণ করা হবে, বিদ্যমান ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোরও একই পরিমাণে উন্নিত করা বাধ্যতামূলক করতে হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় অসমতা তৈরী হবে।
ডিএসইর আজকের পর্ষদের ট্রেক নিয়ে নির্ধারিত ফিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো প্রস্তাবিত আকারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার আলোকে আগামি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হকের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৬ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের তারিখ হইতে ৫ বছর অতিক্রান্ত হবার পরে স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনকারীর অনুকূলে ট্রেক ইস্যু করা যাইবে। কিন্তু ডিএসই ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার পরে প্রায় সাড়ে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ট্রেক ইস্যু করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিএসইসি ডিএসইর পর্ষদের সম্মতি নিয়ে ট্রেক ইস্যুর লক্ষ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছিল। এতে ডিএসইর পর্ষদের ৩ জনের আপত্তি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সম্মতি ছিল।
ওই খসড়া বিধিমালা প্রকাশের উপর ভিত্তি করে গত ২৩ জুন গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেটে নিবন্ধন ফি ৫ লাখ টাকা ও আবেদন ফি ১ লাখ টাকা আছে। এছাড়া ট্রেক নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে ২ কোটি টাকা জামানত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশনের অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক কিনতে পারবেন। গ্রাহকদের পক্ষে শেয়ার বেচা-কেনা করে দেওয়ার ব্যবসা করতে এই ট্রেক পাওয়া যাবে। তবে এই ট্রেকের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হবেন না। শুধুমাত্র শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনা করার সুযোগ পাবেন। কোন প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকার’র সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।