জামায়াত ছাড়তে চায় বিএনপি
এবার জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্য। দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়তে আগেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতকে প্রাধান্য দিতেন স্থায়ী কমিটির নেতারা। এবারও তারা বিষয়টি দলের চেয়ারপারসন বরাবর উপস্থাপনের পক্ষে বক্তব্য দেন। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে নিজেরাই সায় দিলেন।
করোনা-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে গত শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে এমন অভিমত তুলে ধরেন। তবে জামায়াত ছাড়তে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি। বৈঠক সূত্র জানায়, জামায়াত ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ছাড়া বাকি সবাই ঐকমত্য পোষণ করলেও বিষয়টি চেয়ারপারসনকে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। এ নিয়ে আমরা অনেক বলেছি। কিন্তু স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার জামায়াতপ্রীতির কারণে এত দিন সিদ্ধান্তটি নেওয়া যায়নি। শুনেছি শনিবারের বৈঠকে একজন সদস্য ছাড়া সবাই জামায়াত ছাড়ার কথা বলেছেন। এটা ভালো উপলব্ধি। শুনে ভালো লাগছে।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াত নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সব সদস্যের মতামত একই। শুধু একজন সদস্যের বক্তব্যে অস্পষ্টতা ছিল। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সূত্রটি আরো জানায়, আগামীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব কমিটিতে নেতৃত্ব বাছাই হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। কোনো কমিটিই কাউন্সিলবিহীন বা অনির্বাচিত হবে না। এ বিষয়ে অনেক জোরালো মত উঠে এলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে যথাসম্ভব নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করতে তাগিদের কথা উঠে আসে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েই মূলত সবাই বক্তব্য দিয়েছেন। সবাই একমত হন, আগামীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব কমিটি হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এ সময় কমিটি গঠনে অতীতে ভুলত্রুটি নিয়েও কথা বলেন সদস্যরা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও শনিবারের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আরো বিস্তারিত পরে আলোচনা হবে। বৈঠকে চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সবাইকে সতর্ক থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবেই শনিবারের এ বৈঠক হয়। বৈঠকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ও দেশে চলমান স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন সদস্যরা। একই সঙ্গে ভারতসহ পুরো উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বেশ কয়েকজন সদস্য। ভারতের সঙ্গে চীনের চলমান বিরোধ ও এর গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন কয়েকজন সদস্য। এ বিরোধের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও এর প্রভাব বাংলাদেশে কেমন পড়বে বা পড়ার আদৌ কোনো আশঙ্কা আছে কি না—এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পরামর্শ এসেছে।
বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটি জানায়, বাংলাদেশ-ভারতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে নানামুখী উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। এ নিয়ে ভার্চুয়াল সেমিনার বা সভা আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে। এর আগে গত ৯ জুন ‘জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি’ নিয়ে ভার্চুয়াল সভা করে বিএনপি। এ বিষয়ে আরো বৈঠক করতে পারে দলটি।
শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিজ বাড়ি থেকে অংশ নেন—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।