ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:১৯

চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন, নেপথ্যে যা জানা যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন, নেপথ্যে যা জানা যাচ্ছে

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে অবস্থানরত মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ এবং গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল, চলছে তদন্ত।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে হতাহতদের উদ্ধার করা হয়।

মেঘনা নদীতে থাকা সারবোঝাই এমভি আল বাখেরাহ জাহাজের ক্রু ও অন্য কর্মীদের গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাটি ডাকাতি নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। প্রথমদিকে বিষয়টি ডাকাতি বলে ধারণা করা হলেও, জাহাজ থেকে কোনো মালামাল লুট না হওয়ায় এটিকে ডাকাতি বলতে নারাজ পুলিশ কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা জাহাজে সারের বস্তাগুলো সাজানো রয়েছে। চুরি হয়নি কোনো সরঞ্জাম। শুধু ক্রুদের হত্যার পর ভিন্ন ভিন্ন কক্ষের বিছানায় ফেলে রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলোও রয়েছে। শুধু ডাকাতি বা লুটপাটের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটলে আততায়ীরা জাহাজের মালামাল এমনকি গোটা জাহাজ নিয়ে যেতে পারতো বলে মনে করছেন অনেকেই।   এ ঘটনার পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়েছেন পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। মরদেহগুলো ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে পাওয়া গেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম-সচিবকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

কমিটিকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নিরূপণ, অনুরূপ ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ করে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অপর জাহাজ মুগনি-৩ এর মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মো. মাসুদ জানান, সার বহনকারী আল বাখেরাহ রবিবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। এরইমধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরাহ জাহাজের কোনো কর্মচারীকে ফোনে না পেয়ে আমাদের যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আমাদের জাহাজটি ঘটনাস্থল অতিক্রম করার সময় বাখেরাহ জাহাজটি দেখতে পাই। পরে জাহাজে গিয়ে কর্মচারীদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ কল দিই।

এরপর কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ জাহাজ থেকে প্রথমে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। 

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহদের মাথা ও গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতে করা হয়েছে। 

নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত একজনের নাম জানা যায়নি। আর আহত ব্যাক্তির নাম জুয়েল।

উপরে