ইন্ধনদাতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়: সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইন্ধনদাতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। হয়তো একেকজনের মতলব একেক রকম। তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক স্বার্থ থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হলো ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর সেনা অফিসার্স মেসে এক বিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে ইন্ধনে প্রভাবিত না হওয়া। তাহলে ইন্ধনদাতাদের প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সামাজিকমাধ্যমে কোনো ইন্ধনদাতা একটি পোস্ট করার পর সেটি না বুঝেই অনেকে ছড়িয়ে দেন। যেসব ইন্ধনদাতা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে তিন ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের একটি হলো চিহ্নিত অপরাধী গোষ্ঠী, যাদের কাজই হচ্ছে অপরাধ করা। আরেকটা হচ্ছে ইন্ধনদাতা, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করছে। আরেকটা বড় গ্রুপ দেশের সাধারণ মানুষ। যেমন ছাত্ররা বা গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল ভূমিকা চিহ্নিত অপরাধী ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। ছাত্ররা যখন কারো ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে পথভ্রষ্ট হয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের একটু চিন্তা করতে হয়। ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলন করে দেশের এমন একটা পরিবর্তন এনেছে। আশা করি, দেশটা ভালো অবস্থায় যাবে।’
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, ‘গোয়েন্দা, পুলিশসহ সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা করে কাজ করতে হচ্ছে। এতে অনেকের মনে হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক ঘটনা আগেভাগে প্রতিরোধ করা গেছে।’
ব্রিফিংয়ে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ২৪টি অবৈধ অস্ত্র ও ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ জন এখনো চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি আহত ব্যক্তির অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ ছাড়া চারজন গুরুতর আহত রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
গত ২০ জুলাই থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর ১ জন কর্মকর্তা নিহত এবং ১২২ জন সদস্য আহত হওয়ার তথ্য ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।