ঢাকা, সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
আপডেট : ৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:১০

আ.লীগ আমলে বছরে পাচার হয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আ.লীগ আমলে বছরে পাচার হয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলার

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, মূলত বাণিজ্যের আড়ালে হয়েছে এসব অর্থ পাচারের ঘটনা। পাচার হওয়া এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে পাচার হওয়া অর্থ ও তা উদ্ধারের উপায় শীর্ষক সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। সেমিনারের আয়োজন করে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ আমলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে অর্থ পাচার হয়েছে অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ব্যাংক খাত থেকে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা বলেছেন, বাস্তবে তার পরিমাণ আরও বেশি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাত ও বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। যদিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে এর প্রকৃত হিসাব কোথাও নেই। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে সেই দেশের সঙ্গে আইনি চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার রোধে রাষ্ট্রকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থপাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ সময় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি একটা পয়সাও ফেরত আসে তাহলে সেটাও বড় অর্জন হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি যারা চালু করেছেন, সেই প্রভাবশালীরাই পাঁচ তারকা হোটেলে বসে ব্যাংক খাতের নীতি পলিসি তৈরি করত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব পলিসি শুধু ঘোষণা করত। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।

টিআইবি পরিচালক আরও বলেন, দুদক এখন যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে, সেই তথ্য-উপাত্ত তাদের হাতে আগেই ছিল। দুদক প্রমাণ করল, যারা ক্ষমতায় আসছে বা আসবে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যাবে না। সে জন্য তাদের সংস্কার করা দরকার। গ্রিনওয়াচ ঢাকার এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট সিডনি ইউনিভার্সিটির এমিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

উপরে