স্মার্ট এনআইডি পেয়েছেন ৮ কোটি ৯ লাখ মানুষ
দেশের ৮ কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ১৩০ জন মানুষকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কার্যক্রম শুরুর ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও ১৪৩টি উপজেলার নাগরিকদের স্মার্ট এনআইডি দিতে পারেনি সংস্থাটি। এ ছাড়া ছাপা হওয়া ৪৭টি উপজেলার ৭২ লাখের মতো কার্ড বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার (২ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
জনসংযোগ পরিচালক আরও জানান, এখনো বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ জনের কার্ড। সবচেয়ে বেশি স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়েছে ঢাকায়, ১ কোটি ৫০ লাখ ৩ হাজার ৮৬টি। সবচেয়ে কম বিতরণ হয়েছে সিলেটে ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৮৬৬টি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে স্মার্ট কার্ডের বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট উপজেলার (ইসির প্রশাসনিক এলাকা) সংখ্যা ৫১৯টি। এগুলোর মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে ৩৫০টি উপজেলার স্মার্ট কার্ড। বর্তমানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলমান আছে এমন উপজেলার সংখ্যা ১১টি। স্মার্ট কার্ড মুদ্রিত হয়েছে কিন্তু বিতরণ শুরু হয়নি, এমন উপজেলার সংখ্যা ১৫টি। পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে ডেলিভারির অপেক্ষায় রয়েছে এমন উপজেলার সংখ্যা ২১টি। আর স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ করা হয়নি ১৪৩টি উপজেলায়।
ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্ট কার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন। তারপর দীর্ঘ ৪ বছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্মার্ট কার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ড উৎপাদনকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের ৯ কোটি ভোটারের জন্য ৯ কোটি ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি, যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লিখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
সে সময় অবার্থার ১ দশমিক ৫১ ডলার দরে ৭ কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সেই মোতাবেক আগের ১ কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এই কয়েক বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। সব মিলিয়ে আরও প্রায় সাড়ে ৪ কোটির মতো ব্ল্যাঙ্ক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট করে বিতরণে যেতে হবে। এ জন্য আইডিইএর দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আর ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে ৩ কোটি কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও, ডলারের দাম বাড়ায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড দেবে বিএমটিএফ। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাত থেকে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
পদায়নে বৈষম্যের অভিযোগ ইসি কর্মকর্তাদের
ইসি সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের পদায়নে বৈষম্য করছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের যথাযথ স্থানে পদায়নের দাবিও করেছেন ইসি কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে ইসি সচিব শফিউল আজিমের কাছে তারা এ-সংক্রান্ত লিখিত দাবি জমা দিয়েছেন।
তাতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে শূন্যপদে এ পর্যন্ত সব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতার কারণে বিপুল সংখ্যক পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন পদে যোগ্যতর স্থানে পদায়ন না করে জুনিয়র এবং নিচের গ্রেডের পদের কর্মকর্তাদের উচ্চতর পদে পদায়ন করে চরম বৈষম্যমূলক অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে, যা বর্তমান ছাত্র-জনতার বিপ্লবী সরকারের মূল চেতনার পরিপন্থি। উদাহরণস্বরূপ মাঠপর্যায়ের ১০ অঞ্চলে চতুর্থ গ্রেডের ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও খুলনা, রাজশাহী ও কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার পদে নিম্নতর ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে।
লিখিত দাবিতে আরও বলা হয়েছে, মাঠপর্যায়ে ১৯টি ৫ম গ্রেডের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদের মধ্যে ৮টি জেলায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদে জুনিয়র ষষ্ঠ গ্রেডের এবং অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসারদের দীর্ঘদিন ধরে পদায়ন করে রাখা হয়েছে। অথচ ওই সব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত যোগ্যতর কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যমূলকভাবে সচিবালয়ে দপ্তরবিহীনভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যথাযোগ্য স্থানে পদায়ন নিশ্চিত করা, কোনো ক্ষেত্রে কোনো পদে যোগ্যতর কর্মকর্তার ঘাটতি দেখা দিলে জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুসারে পরবর্তী কর্মকর্তাকে পদায়ন করার দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদিক সরকার পতনের পর নির্বাচন কমিশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পদায়নেও নিয়মনীতি ইসিসচিব মানছেন না বলে ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন।