ভোটারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চেয়েছে বিদেশি কূটনীতিকরা
আগামী ৭ জানুয়ারি হতে যাওয়া নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা জানতে চেয়েছে বিদেশি কূটনীতিকরা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানানো হয়েছে, ভোটারদের চাপ দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, মিশন প্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্রিফ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এ ব্রিফ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি।
সিইসি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা জানতে চেয়েছে, সরকার থেকে বা নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা? যার পরিপ্রিক্ষেতে তাদের ভোট দিতে যেতে হবে। তাদের বুঝিয়েছি, আমাদের দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করার কোনো কারণই নাই।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, যখনই নির্বাচন করি আমরা ভোটার সাধারণের কাছে একটা আবেদন রাখি যেটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। আপনারা ভোট কেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেটা চাপ নয়, এটা হচ্ছে সচেতনতা।
ভোটারদের চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে বিরোধী দল বিএনপির ভোটে না আসার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, বরং চাপের কথা যদি আপনারা বলেন, আমাদের অন্য দিক থেকে হতে পারে। যেমন-একটি বয়কোটিং দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করছেন এবং বর্জনটা যদি বর্জনই থাকে সেখান থেকে ভোটারদের প্রতি আবেদন থাকতে পারে, আপনারা যাবেনই (ভোট কেন্দ্র) না। তাহলে ভয়ে একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটা আমরা তাদের (বিদেশি কূটনীতিকরে) ব্যাখ্যা করেছি।
বিদেশি দূতদের ব্রিফ করার কারণ জানান হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমন্ত্রণ জানানোর কারণটা হচ্ছে, তারা সবসময় আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তারা (বিদেশি দূতরা) বিভিন্ন সময়ে আমাদের কার্যালয়ে (ইসিতে) এসেছেন, আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তারা (বিদেশি দূতরা) যে মতগুলো বিনিময় করেছেন মূলত সকলের একটি প্রত্যাশা ছিল এবং আছে। সেটা হলো, আগামী নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়। এ জিনিসটার ওপর তারা (বিদেশি দূতরা) খুব জোর দিতে চান।
সিইসি বলেন, আমরা লাস্ট মুমেন্টের অবস্থাটা তাদের ব্রিফ করেছি এবং আমি একটা স্টেটমেন্ট রিড আউট করেছি। এখন পর্যন্ত আমরা কোন অবস্থানে আছি। তারা (বিদেশি দূতরা) শুনেছেন। তারা দু’চারটা প্রশ্ন করেছেন। তেমন কিছু নয়। যে প্রশ্নগুলো এসেছে-তার মধ্যে একটি হলো-অভিযোগ কি পরিমাণ পাচ্ছি? অভিযোগ কত। আমরা তাদের জানিয়েছি যে, অভিযোগ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তিনি বলেন, ছোট-খাটো অভিযোগ হতে পারে। কেউ কারও পোস্টার ছিড়ে ফেলল। আমরা প্রায় ছয়শ’র মতো অভিযোগ পেয়েছি। তারমধ্যে আমরা প্রায় চারশ’র মতো অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছি।
অভিযোগ ছাড়াও বিদেশি দূতরা ভোটের রেজাল্ট প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এর বাহিরে তারা আরেকটা জিনিস জানতে চেয়েছে, ভোটের রেজাল্ট। আমরা তাদের জানিয়েছি, রেজাল্টের ব্যাপারে আমরা একটা অ্যাপ করেছি। স্মার্ট ইলেকশন মেনেজম্যান্ট অ্যাপ। আমরা তাদের অবহিত করেছি, প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং চলাকালে দুই ঘন্টা পরপর যে তথ্য আমাদের প্রতিটি ইলেকশন সেন্টার পাওয়া যাবে তা আপলোড করা হবে। আপলোড করা হলে যে কোনো নাগরিক পৃথিবীর যে কোনো জায়গা দেশে বা বিদেশ থেকে থেকে এক্সেস নিয়ে জানতে পারবে ভোটের পরিমাণটা কিভাবে হচ্ছে।
সিইসি বলেন, অ্যাপসটা ইন্ট্রোডিউস করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা টোটাল যে ক্রেডিবিলিটি বা স্বচ্ছতা যে অবস্থানটা সেটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করার জন্য। যেন তারা আশ্বস্ত হতে পারেন। যাতে কোটেশান দেখে সেন্ট্রারে কোনো রমক অনিয়ম, কারচুপি বা অতিদ্রুত জাম্প হয়ে গেল কিনা বা অবিশ্বাস্য কোনো কিছু ঘটেছে কিনা, সেটা তারা জানতে পারেন।
ভোটের সময় সারাদেশে প্রয়োগ করা আইন শূঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আট লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা পোলিং কালেকশানের সঙ্গে সম্পক্ত থাকবেন। ওরা ভোট গ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্টান্ডবাই থাকবে। নয় লাখ প্রস্তুত আছে। আইন শূঙ্খলা রক্ষাকারীর যে বাহিনীগুলো আছে সব মিলিয়ে আনসার, বিজিবি, পৃলিশ, র্যাব, আর্মি, নেভি ও কোস্টগার্ড সব মিলিয়ে আরও আট লাখ আইন শূঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে আছে, মাঠে থাকবে, ভোট শেষ হওয়া পযন্ত। এটা বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। এছাড়া আমরা আইন শূঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আরও তিন হাজার মেজিস্ট্রেট এবং জাজেস ওরাও কিন্তু মাঠে থাকছে।
নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সহিংসতা পরিমাণ আছে। তবে খুব কম।