ওয়াসার এমডির ‘ভার্চুয়ালি’ অফিস নিয়ে হঠাৎ জলঘোলার রহস্য কী?
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান তিন মাসের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন। দীর্ঘ দুই বছর পর শারীরিক চিকিৎসা এবং সেখানে অবস্থানরত নিজের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতেই এখন অবস্থান করছেন সেখানে। কিন্তু ‘ভার্চুয়ালি’ অফিসের সব খোঁজ খবরই রাখছেন। সরকারি সব নিয়ম-কানুন মেনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাঁর ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে।
কিন্তু এ ‘ছুটি’ নিয়ে ইতোমধ্যেই ‘জলঘোলা’ করতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। তাদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবেই একই সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। ‘কোন কিছুই ভালো লাগে না’ রোগে আক্রান্ত পক্ষটির সঙ্গে কারও কারও ‘গোপন সমঝোতা’ তৈরি করেছে অপার রহস্যের। এ নিয়েও চলছে নানা রকম কানাঘুষা। ক্ষণে ক্ষণে ঘনীভূত হচ্ছে সন্দেহ-সংশয়ের।
অথচ দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। করোনাকালে মিলেছে এর বাড়তি সুফলও। প্রাণঘাতী মহামারি সামাল দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু রাখতে যখন বিশ্বের অনেক দেশই হিমশিম খেয়েছে ঠিক তখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের কারণে দেশের চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়নি।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলমান কার্যক্রম সমন্বয় ও নেতৃত্বই দিয়েছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। সরকারি বেশিরভাগ কর্মকর্তারা এমনকি আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সকল সংস্থার দাপ্তরিক বা প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে ঘরে বসে ভিডিও অথবা টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে। শিক্ষকরাও ক্লাস নিচ্ছেন অনলাইনে। ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে বাড়িয়েছে গতিশীলতা। নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানোও করেছে অধিকতর সহজ।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম ডিজিটাল বাংলাদেশের সেই সুবিধাই গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে এক অফিস আদেশে তিনি বলেছেন ‘আমি বহিঃবাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে যে কোনো পলিসি প্রণয়ন এবং অন্যান্য বিষয়ের দায়িত্ব নিজে পালন করব। এ জন্য ই-নথি, ই-জিপি, ই-মেইল, ফেস টাইম/ভাইবার, হোয়াটসআপ/ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করব।’
আদেশে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘ঢাকা ওয়াসার এমডি যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকলীন সময়ে সংস্থার সকল বিভাগীয় প্রধানগণ নিজ নিজ রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। আর যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দেশনা গ্রহণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
এছাড়া কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) প্রকৌশলী আবুল কাশেম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে বিভিন্ন সভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। বিভিন্ন সভায় সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন এবং রুটিন কার্যাদি সম্পন্ন করবেন।’
ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস ‘ছুটি’ কাটাবেন। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ওয়াসার কার্যক্রম তদারকি করবেন। এ বিষয়টি এমডির বেলায় ঘটেছে বলেই একটি বিশেষ মহলের নানামুখী কারসাজি ও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাকসিম এ খান এ চক্রটিকে অনেক আগেই ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ওয়াসার ঘুরে দাঁড়ানোর কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করতে একই রকমের সিন্ডিকেটের নানামুখী অপপ্রয়াসের পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন। তাকসিম এ খানও আস্থা-বিশ্বাস ধরে রেখেই গত ১০ বছরে ঢাকা ওয়াসার অনেক অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতেও মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত মিথস্ত্রিয়া দেখা যায়। আলট্রা রাইট, আলট্রা লেফট সময় সময় এক হয়ে যায়।
আমার মনে হয় ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে গত ক’দিনের অপপ্রচারের বেলাতেও একই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তিনি ছুটিতে গেলেও নিয়ম বা আইন লঙ্ঘন করেননি মোটেও। ঢাকা ওয়াসাকে সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকে এমডির এই নিরলস উদ্যোগকে যেখানে ইতিবাচক হিসেবে দেখার কথা সেখানে নেতিবাচকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে জনমনে।
একই সূত্র বলছে, ঢাকা ওয়াসার অ্যাক্ট ১৯৯৬ অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সরকারের অনুমাদনক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী। তাঁর চাকরি ওয়াসা আইন-১৯৯৬ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি তাঁর সমস্ত কর্মকান্ডের জন্য বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করেন। তাঁর দায়িত্ব পালন, সুযোগ সুবিধা এবং চাকুরীর অন্যান্য শর্তাবলী বোর্ডই নির্ধারণ করেন। সরকারি চাকরির বিধিবিধান তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়।
সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের কুশীলব, ষড়যন্ত্রকারীরা বরাবরই সক্রিয় রয়েছে। নানাভাবেই তাঁরা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হীন কায়দায় অভিঘাত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলজাজিরা ইস্যুর পর তাদের লম্ফঝম্ফ সরকার বিরোধী মনোভাবকে স্পষ্ট করে তুলেছিল। সেই মিশন থেকে এখনও তাঁরা সরে আসেনি।
ওয়াসার এমডির বিষয়টিকে ‘ফোকাস’ করে তাঁরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পুরনো কৌশলকেই বেছে নিয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টার এই বিষয়টি দু:খজনক বলেই মনে করছে ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আইন মেনেই সরকারের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষ তার ‘ছুটি’ মঞ্জুর করেছেন।
ঢাকা ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ভার্চুয়ালি অফিস করা নিয়ে আইনগত কোন ব্যত্যয় হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। একটি গণমাধ্যমের প্রেেশ্নর জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যায় থেকে অনুমোদিত হয়েছে। এখানে আইনগত কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
তথপ্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন অফিসের বাইরে থেকেও অফিস করা সম্ভব। আমি অফিসের কাজে কক্সবাজার গেলে সেখান থেকে ই-ফাইলের কাজ সম্পন্ন করি। কিছুদিন আগে দেশের বাইরে গিয়েছিলাম, ওই সময় কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাইনি। সেখান থেকেই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’