ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১০:৪৯

হাসপাতালে আসেন হাজিরা দিতে, ব্যস্ত থাকেন ব্যবসায়

অনলাইন ডেস্ক
হাসপাতালে আসেন হাজিরা দিতে, ব্যস্ত থাকেন ব্যবসায়

চিকিৎসকদের উদ্দেশে হাই কোর্ট বলেছে, সাধারণ মানুষের জীবন হাসপাতালের ক্লার্ক, পিয়নের হাতে ছেড়ে দিয়ে আপনারা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে নেমে পড়েন। হাসপাতালে আসেন শুধু হাজিরা দেওয়ার জন্য। তারপর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে চলতে পারে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতা সংক্রান্ত শুনানিতে গতকাল বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করে। গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১২ জনকে তলব করে আদালত। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয় আদালত। গতকাল আদালতের তলবে হাজির হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনসহ ৯ চিকিৎসক এবং পুলিশ সুপারসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা। আদালতে হাজির হয়ে ডাক্তারি পরীক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন চিকিৎসকরা। পরে চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ দেয় হাই কোর্ট। মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেওয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসংগতি নিয়ে হাই কোর্ট বলে, আপনারা একেক রিপোর্টে একেক তথ্য দিয়েছেন। ভাষাও বোঝা যায় না। সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে এমন ভাষায় রিপোর্ট লিখতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আদালত বলে, পুলিশকে বলা হয়, জনগণের বন্ধু। আমরা আপনাদের কাজকর্মে সেটাই দেখতে চাই। পরে তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসংগতির ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ। তিনি আদালতকে বলেন, আমাদের ফরমগুলোর মধ্যে ত্রুটি আছে। আমরা এগুলো সংশোধন করে নেব। এ সময় তিনি ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তাদেরকে সতর্ক করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়।

তবে আদালত বলে দেয় যে কোনো সময় আদালত ডাকলে হাজির হতে বাধ্য থাকবেন তারা। এ ছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে আদালত। এ ছাড়া আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম হয়রানি করা থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেয় আদালত। আদালত এই মামলায় ভুক্তভোগীর (শিশুর) ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া মামলাটি তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতে শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম। লিগ্যাল এইডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে।

উপরে