ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১০:৫৩

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শ্রম, মানবাধিকার ও জনস্বাস্থ্য খাত অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। প্যারিস চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু অর্থায়ন, কার্বন নিঃসরণ প্রশমন ও অভিযোজন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে একটি সুরক্ষিত ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে শ্রম, মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকারসমূহ” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কথা বলেন। 

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) আওতায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং মানবাধিকারের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও তা মোকাবিলায় সম্ভাব্য করণীয়সমূহ তুলে ধরা হয়।  উল্লেখ্য, ২০১১-১৩ মেয়াদে সিভিএফ সভাপতি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো ২০২০-২২ মেয়াদে সিভিএফ-এর সভাপতিত্ব করছে।     

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ড. মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমসমূহও তুলে ধরেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির সম্মুখীন দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোটিয়ার নিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করেন।    

অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেল সদস্য ও সিভিএফ-এর ‘ভালনারাবিলিটি’ বিষয়ক থিমেটিক দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, মালদ্বীপের বর্তমান স্পীকার, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সিভিএফ-এর ‘অ্যাম্বিশন’ বিষয়ক থিমেটিক দূত মোহাম্মদ নাশিদ, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক উপ-হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উপ-মহাপরিচালক মার্থা নিউটন এবং ইথিওপিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।      

ড. টেদ্রোস তাঁর বক্তব্যে বিশুদ্ধ বাতাস, স্বচ্ছ ও নিরাপদ পানীয় জল, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। জলবায়ু সংকট যথাযথভাবে মোকাবিলা না করা গেলে তার ফলাফল কোভিড-১৯-এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ড. টেদ্রোস জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স সংক্রান্ত ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স’ গ্রুপের কো-চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।        

সিভিএফ'র থিমেটিক দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বিপন্ন জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কোভিড-১৯ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বিশেষ করে, তিনি কর্মসংস্থান, মানবাধিকার ও জনস্বাস্থ্য - এই তিন ক্ষেত্রে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রকট হয়ে দেখা দেবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সব ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।    

মোহাম্মদ নাশিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, মালদ্বীপ সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’র আদলে একটি জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি সিভিএফ'র সদস্য রাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশসমূহকেও জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় এই ধরনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানান।    

জেনেভাস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও জলবায়ু সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দেন।

উপরে