ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:৪২

জেনারেল সারওয়ার্দীর অর্থপাচার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

অনলাইন ডেস্ক
জেনারেল সারওয়ার্দীর অর্থপাচার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আনসার ভিডিপির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি করে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন বৈঠক থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর।

অভিযোগ রয়েছে, বিপুল সম্পদের মালিক হতে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে তার উপার্জিত টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সম্প্রতি চৌধুরী আবু সাহেদ নামের এক ব্যক্তির ৩০ পৃষ্ঠার অভিযোগ দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওই অভিযোগ পেয়ে তা যাচাই-বাছাই করে দুদকের উচ্চপর্যায়ের টিম। পরে তা অনুমোদনের জন্য কমিশনে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান কমিটি গঠনে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ বিষয়ে একটি টিম বিভিন্ন দফতরে সারওয়ার্দীর সম্পর্কে তথ্য চাইবে বলে জানা গেছে। তবে দুদকের দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচিত ও সমালোচিত। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ‘অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর’ বক্তব্যের কারণে গত ২৯ জুলাই সেনা কর্তৃপক্ষ ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাকে। সেসময় আইএসপিআর জানায়, সম্প্রতি বিএ-২০০৪ লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী (অবসরপ্রাপ্ত) বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সেনানিবাসে প্রবেশ এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন, যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। উল্লেখ্য, তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেওয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, তিনি এলপিআরে এ থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন এবং সেনা আইন বর্হিভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিবাহ করেন। কিন্তু তিনি বিবাহের পূর্বে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে ৩ নভেম্বর ২০১৮ থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন। এমনকি তিনি বিবাহের পূর্বে তাকে সাথে নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়ি’তে অবকাশ যাপন, বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণ ও অবস্থান করেন, যার সচিত্র আলামত সামরিক ও অসামরিক পরিমন্ডলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এছাড়াও তিনি যাকে বিয়ে করেন সে একজন বিতর্কিত নারী হিসেবে পরিচিত।

আইএসপিআর আরও জানায়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর (অব.) এ ধরনের আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর। এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসার এবং অন্যান্য পদবীর মধ্যে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে ও বিরূপ প্রভাব ফেলে। সামগ্রিক বিবেচনায়, গত ১০ এপ্রিল ২০১৯ এই কর্মকর্তাকে (চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী) সেনানিবাস ও সেনানিবাস আওতাভুক্ত এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, সেনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘অবাঞ্চিত ব্যক্তি’র জন্য সেনানিবাস ও সেনানিবাসের আওতাভুক্ত সব স্থাপনা এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন- সিএমএইচ এ চিকিৎসা সেবা, অফিসার্স ক্লাব, সিএসডি শপ ইত্যাদিতে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ।

মোবাইল ফোনে হুমকি ও মানহানির অভিযোগে সাবেক স্ত্রী ফারজানা নিগারের বিরুদ্ধে ২৭ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ফারজানা নিগার মামলার বাদী চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর স্ত্রী ছিলেন। ফারজানা নিগারের আচরণে বাদী অসন্তুষ্ট। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীর বিক্রমের রাষ্ট্রীয় কাজসহ সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তিনি সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এতে বাদী সামাজিক ও মানসিকভাবে অসম্মানিত হন।

অভিযোগে হাসান সারওয়ার্দী আরো বলেন, পরবর্তীতে বাদীর সঙ্গে আসামির দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। বাদী পরবর্তীতে চ্যানেল আই’র উপস্থাপিকা ফারজানা ব্রাউনিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আসামি উক্ত ঘটনার পর থেকে বাদীর মানহানিসহ শারীরিক ক্ষতির জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করেন। গত ৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে ফারজানা নিগার মোবাইল ফোনে বাদীকে হুমকি দেন।

 

 

উপরে