ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৫০

করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু

অনলাইন ডেস্ক
করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু

করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। টেস্ট বাড়ানোয় আগের চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। করোনার ছোবলে প্রাণ হারানো রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। চলতি মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৯ জন। ডেঙ্গু-করোনা আগ্রাসী রূপ নিলেও অবহেলিত সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, শীত শুরুর আগেই করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত একমাত্র সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনটি বিষয় আবশ্যক। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু বাইরে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে খুব কম মানুষকেই দেখা যায়। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়লে বিপদ বাড়বে। এজন্য নিজের বাড়ি ও চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও স্বচ্ছ পানি জমতে দেওয়া যাবে না।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ২১ ও নারী সাতজন। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ৪১৬ জন। দেশের ১১৭টি ল্যাবরেটরিতে ১৬ হাজার ২৪০টি নমুনা সংগ্রহ ও ১৬ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৮৩ জন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত রবিবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৬০ জন, মারা গেছেন ৩৮ জন। করোনা সংক্রমণের হার ১৪ দশমিক ৮৫। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৭০ জনের। গত শনিবার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৪৩ জনের, করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৪৭ জন। মারা গেছেন ২৮ জন। রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৬১। গত ২০ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১১টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৮০ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১০ দশমিক ১৪। ২১ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৬টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৪৫ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১০ দশমিক ৯৭। ২২ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৫৮টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৩৪। ২৩ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ১১৯টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৬ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ২৩। ২৪ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১০ হাজার ৯৯৮টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৪ জনের। সর্বনিম্ন সংক্রমণ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা। হাট-বাজার, অফিস, গণপরিবহন সব জায়গায় মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করছে মানুষ। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ পরিপত্র জারি করেও মাস্ক পরানো যাচ্ছে না মানুষকে। সর্বশেষ মাস্ক পরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নেমেছে রাজধানীসহ সারা দেশে। গতকাল রাজধানীর নিম্ন আদালতপাড়ায় দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছে অসংখ্য মানুষ। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে চলছে গল্প, সলাপরামর্শ। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা নেই। ধূমপান, চা পান, হাত মেলানো সবই চলছে। করোনার ভয়াবহতার লেশমাত্র নেই সেখানে জমায়েত হওয়া মানুষের আচরণে। আইনজীবী মুরাদুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই আদালত চত্বরে জনসমাগম বেশি হয়। তার মধ্যে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তাহলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়। মানুষকে বলেও মাস্ক পরানো যায় না। আমার মাধ্যমে পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয় কিনা তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’

করোনার সঙ্গে মৌসুম শেষে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীও। নভেম্বরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন, অক্টোবরে ১৬৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৭ জন। চলতি মাসের ২৩ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৯ জন। রাজধানীর পাশাপাশি বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ১৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর হাসপাতালে। গতকাল ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৭৭ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৬ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত দুটি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ১৭৯ জন। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় মানুষ। মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১০ দিনের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করছে। তবু প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীর বাসিন্দারা।

উপরে