ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ০৭:৪৬

কাজী আনিসের শতকোটি টাকার সম্পদ জব্দ

অনলাইন ডেস্ক
কাজী আনিসের শতকোটি টাকার সম্পদ জব্দ

অবৈধ উপায়ে সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসের ১০০ কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান গতকাল সোমবার এসব সম্পদ জব্দ করেন। এর আগে কাজী আনিসের বিরুদ্ধে দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত ২৯ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে কাজী আনিসের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে এক কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু দুদকের এই কর্মকর্তার তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রায় শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ।

দুদক সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কলাবাগানে পাঁচতলা বাড়ি, ধানমণ্ডি ও ওয়ারীতে দুটি ফ্ল্যাট, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যানে তিনটি দোকান ও এক হাজার ৩০০ স্কয়ার ফুট বাণিজ্যিক স্পেস, গুলশান-২ এলাকার একটি মার্কেটে দুটি দোকান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বোয়ালিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি, একটি পেট্রলপাম্প, ৩০ কোটি টাকার ১৫ বিঘা জমি ও কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমির খোঁজ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া দুদক আনিসের ৫০ কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেনের হদিস পেয়েছে।

বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলাসহ অন্যান্য ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিং অ্যাকাউন্ট, এফডিআর এইচটিসিসহ বিভিন্ন ফরমে পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ টাকার

অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার সম্পদের তথ্য পেলেও যা আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই। এসবের স্বপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ উৎসও নেই।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোর জুয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগের এই নেতাকে নজরদারিতে রেখেছিলেন র‌্যাব ও পুলিশের তদন্তকারীরা। কিন্তু গ্রেপ্তারের অভিযানের খবর পেয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আনিস। পালিয়ে প্রথমে ভারত হয়ে এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, যুবলীগ কার্যালয়ের সামান্য কর্মচারী থেকে যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হয়েই উৎকাচ নিয়ে হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।

যুবলীগের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘কাজী আনিস এক সময় যুবলীগ অফিসের কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। কয়েকজন শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে তিনি সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক বনে যান। তাঁকে সবাই ক্যাশিয়ার বলেই চিনত। গত ১২ বছরে আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতোই বদলেছে তাঁর ভাগ্য। পাঁচ বছর আগেও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে টিনের ঘর ছিল তাঁর। এখন সুরম্য অট্টালিকা। আছে একাধিক বাড়ি। ময়মনসিংহের ভালুকা, ঢাকার স্বামীবাগ, ইত্তেফাক মোড়, যাত্রাবাড়ী, শুক্রাবাদ ও উত্তরায় আছে বাড়ি। লালমাটিয়া, ঝিকাতলা ও ধানমণ্ডিতে আছে কয়েকটি ফ্ল্যাট। উত্তরা, মিরপুর ও গুলশানে মার্কেটে আছে দোকান। নারায়ণগঞ্জে চটের মিল আছে আনিসুরের।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জি কে শামীম, খালেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েন আনিসুর। তাঁর সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোসহ সব অপকর্মে জড়িত ছিল।

 

উপরে