মানুষের হাতে ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা
ব্যাংকের বাইরে অর্থাৎ দেশে মানুষের হাতে এখন ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকা দিয়েই চলছে নিত্যদিনের বিকিকিনি। এটা বাংলাদেশে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
বর্তমানে (সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দেশের মুদ্রা বাজারে মোট মুদ্রা আছে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে মেয়াদি আমানত হিসেবে রয়েছে ১১ লাখ ৬৫৯ কোটি টাকা। তলবি আমানত রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। আমানতের এই হিসাবের মধ্যে আন্তঃব্যাংক আমানত ও সরকারি আমানতের হিসাব থাকে না।
এ তথ্য গত সেপ্টেম্বরের। গত এক বছরে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার জোগান বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মানুষের হাতে ছিল প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য নগদ টাকার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের বাইরে নগদ ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা ছিল।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনীতির কর্মকাণ্ড আগের থেকে অনেকে বেড়েছে। তাছাড়া অনেক কাজেরও আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে। আগে অনেকে বাচ্চা রাখার জন্য আলাদা অর্থ ব্যয় করতো না। এখন দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখে। এছাড়া ঘরের কাজের জন্য এখন অনেক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে, যারা টাকা নিয়ে সেবা দেয়। এভাবে টাকার ব্যবহার আগের থেকে বেড়েছে।’
তাছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণেও এখন অনেক মানুষ নিজের কাছে টাকা রাখছেন বলে মত দেন অর্থনীতির এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘কখন কী ঘটে। এই ভয়ে অনেকে হাতে কিছু টাকা রাখছেন। যে কারণে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছে।’
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুল্লাহ ফয়সাল বেতনের টাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বাসা ভাড়া পরিশোধ করেন, অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের বিল দেন, কার্ডের মাধ্যমে বাজার-সদাই করেন। কখনও কখনও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আত্মীয়দের বা বন্ধু-বান্ধবদের গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠান। এক্ষেত্রে তার আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বা কখনও আরও বেশি ব্যাংকের মাধ্যমেই ব্যয় করেন তিনি।
এই চাকরিজীবীর মতো নিত্যদিনের খরচের জন্য সবার কাছেই কিছু না কিছু নগদ টাকা রাখতে হয়। তবে কার কাছে কতো আছে, সেটা সবাই গোপন রাখেন ছিনতাই, ডাকাতির ভয়ে।
তাছাড়া সরকারি কোনো সংস্থার প্রয়োজন ছাড়া একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে কতো টাকা আছে, তা জানতে চাওয়াটাও সামাজিকভাবে স্বীকৃত নয়।
তবে দেশের সব মানুষের কাছে মোট কত নগদ টাকা আছে, তা জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে।
দেশে নগদ টাকার বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থায় এখন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে দেশের মানুষ এটিএম বুথে লেনদেন করেছেন ১৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিনে কার্ড দিয়ে কেনাকাটা হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ই-কমার্সে লেনেদেন হয়েছে ৪০৬ কোটি টাক। এছাড়া বুথে গিয়ে টাকা জমা দেয়া যায় এমন মেশিনে লেনদেন হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ওই মাসে কার্ডে লেনদেন হয় ১৬ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।
এছাড়া ব্যাংকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে স্থানান্তর হয় ২৫ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। আরটিজিএসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অর্থ স্থানান্তর হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে মোট লেনদেন হয় ৪৯ হাজার ১২১ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৭ হাজার কোটি টাকা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় ৩০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
এক বছর আগের তুলনায় গত সেপ্টেম্বরে বাজারে মোট মুদ্রা জোগান বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাজারে মুদ্রার জোগান ছিল ১২ লাখ ৫১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।