ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:০৫

দেশে করোনা বেড়ে গেছে, সাধারণ ছুটি নিয়ে যা ভাবছে সরকার

অনলাইন ডেস্ক
দেশে করোনা বেড়ে গেছে, সাধারণ ছুটি নিয়ে যা ভাবছে সরকার

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রহর শুরু হয়ে গেছে- এমনটি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত দুইদিনে করোনা সংক্রমণের যেমন ঊর্ধ্বগতি, তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সামনের দিনগুলোতে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে সরকার ঘোষণা করেছে, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে, সেইসাথে মাস্ক ব্যবহারের জন্য মোবাইল কোর্টেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

মাস্ক ব্যবহার কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানাই করোনা মোকাবেলার একমাত্র সমাধান নয় বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস পরিষ্কারভাবে বলেছেন, করোনা প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য লকডাউন এর বিকল্প নেই। কিন্তু শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন দেশ লকডাউন শুরু করে দিয়েছে।

ইতোমধ্যে ইউরোপের ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি লকডাউনে গেছে। ব্রিটেনেও আংশিক লকডাউন করা হয়েছে। নতুন করে লকডাউনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে আরও কিছু দেশে। এ রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি করবে।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, সরকার এখন পর্যন্ত লকডাউন বা সাধারণ ছুটির কোন পরিকল্পনা নাই। সরকার সেদিকে যেতেও চাচ্ছেনা। সরকারের একজন দায়িত্ব শীল মন্ত্রী বলেছেন, কতগুলো বাস্তবতা আমাদের অনুকূলে রয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশের মৃত্যুর হার অনেক কম। যার ফলে করোনা ফ্লু বা ঠান্ডা জ্বর বা ডেঙ্গুর মতোই একটি রোগ। এ রোগের জন্য যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, অনেকে ঘরে থেকেও সুস্থ হয়ে উঠছে। কাজেই সরকার লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মপ্রবাহকে বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি ভাবছে না।

দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, বিশ্বের যে অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে লকডাউন কোন সমাধান নয়। বরং মাস্ক পরিধান করা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হল একমাত্র সমাধান। আর এ বিবেচনা থেকে সরকার সামনের দিনগুলোতে লকডাউন এর বদলে স্বাস্থ্য বিধি মানার উপরেই গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি অনেক বেড়ে যায় এবং মৃত্যু সংখ্যা বাড়ে সেক্ষেত্রে কি করবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে আমরা স্বাস্থ্যবিধির উপরে আরো কঠোরতা আরোপ করব। ধাপে ধাপে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। যেমন এখন বাজার-হাট সবসময় খোলা আছে। দোকান-পাট অবাধে খোলা আছে। প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেয়া হয়েছে।

যদি করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে তাহলে এই বিষয়গুলোর দিকে প্রথমে বাজার-হাট সীমিত করা হবে। উন্মুক্ত স্থানে দূরত্ব রেখে বাজার হাটের ব্যবস্থা করা হবে, যেটি প্রথম পর্যায়ে করা হয়েছিল। দোকানপাট খোলার ক্ষেত্রে সময় সীমিতকরণ করা হবে এবং সেখানে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। তবে সরকার মনে করে যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে করোনা মোকাবেলার নীতি সঠিক নয়। এজন্য সরকার এখনো কোনো লকডাউনের পথে যায়নি।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার মনে করছে যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মত পরিস্থিতি হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলেন যে, এর আগে যখন ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের করোনার সময় শুরু হয়নি। তখনো সরকার বলেছিল যে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তেমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে না। বাংলাদেশে করোনার ব্যাপক বিস্তৃত হবে না। সার্স যেমন বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃত হয় নি, সে রকম করোনা থেকেও বাংলাদেশ দূরে থাকবে।

কিন্তু পরবর্তীতে করোনার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছিল, যদিও বেশ ভয়ংকর হয়নি। আর এ কারণেই মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে এখন থেকেই বিকল্প চিন্তা করা উচিত।

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত ৫৭ দিনে সর্বোচ্চ। আর গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে আরও ২ হাজার ২১২ জন করোনা রোগী, যা গত ৭৬ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশে করোনাভাইরাসে একদিনে ৪০ জনের মৃত্যু হয়। এর পর মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কমতে থাকে। এদিকে গত ২ সেপ্টেম্বর দেশে একদিনে ২ হাজার ৫৮২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর পর প্রতিদিন ২ হাজারের নিচে শনাক্ত হয় করোনা আক্রান্ত রোগী।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

উপরে