২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
আগামীকাল ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের এক দশকপূর্তি। ডিজিটাল সেন্টারের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নাগরিকদের ২ কি.মি. আওতায় মধ্যে সেবাপ্রদান কার্যক্রম আনয়নের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই প্রোগ্রাম)।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন সেবা সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় প্রায় ৫০০ রকমের সরকারি-বেসরকারি সেবা এসব সেন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ তৃণমূল জনগণকে ই-সেবাসম্পর্কে অবহিতকরণ, সেবাগ্রহণে মধ্যস্বত্বভোগী ও দুর্নীতির আশ্রয় নিরোধে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ‘মুজিব শতবর্ষ ই-সেবা ক্যাম্পেইন-২০২০’ পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
১১ অক্টোবর হতে ১০ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে চলছে। ক্যাম্পেইনে প্রদেয় ই-সেবা প্রদানের রিপোর্টের ভিত্তিতে ১০ জন উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্পব্যয়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত। বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার ২৭০-এর অধিক সেবা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জমির পর্চা, নামজারি, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমাদান, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হজ রেজিস্ট্রেশন, সরকারি সেবার ফরম, টেলিমিডিসিন, জীবনবীমা, বিদেশে চাকরির আবেদন, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বাস-বিমান-লঞ্চ টিকেটিং, মেডিকেল ভিসা, ডক্টরের এপয়েনমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, সিমবিক্রয়, বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ, ই-মেইল, কম্পোজ-প্রিন্ট-প্রশিক্ষণ, ফটো তোলা, ফটোকপি, সরকারি ফরম ডাউনলোড করা, পরীক্ষার ফলাফল জানা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবদেন করা, অনলাইন ভিসার আবেদন করা, কৃষি পরামর্শ ও তথ্য সেবা ইত্যাদি।
একজন উদ্যোক্তা সেবাপ্রদানের মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। গড়ে প্রতিমাসে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ সেবা গ্রহণ করে থাকে। ২০১৩ সালে দেশে দেশের সকল পৌরসভার ‘পৌর ডিজিটাল সেন্টার এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডে ‘নগর ডিজিটাল সেন্টার’ চালু করা হয়। ২০১৮ সালে যার মধ্যে গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য গাজীপুরে ৫টি এবং মৎসজীবী শ্রমিকদের জন্য খুলনার রূপসায় ১টি ‘স্পেশালাইজড ডিজিটাল সেন্টার’ চালু করা হয়। ২০১৮ সালেও সৌদিআরবে ১৩টি ‘এক্সপাট্রিয়েট ডিজিটাল সেন্টার’ স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪২৯টি এবং ৫ সহস্রাধিক নারী উদ্যোক্তাসহ মোট উদ্যোক্তা ১৩ হাজারের অধিক।
এটুআই জানিয়েছে, বর্তমানে দেশব্যাপী ৬ হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত ১৩ হাজার ৩৭২ জন উদ্যোক্তা ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স সেবাসহ ২৭০টি অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদান করছেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টার হতে মোট ৫৫.৪ কোটি সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে নাগরিকদের ১৬৮ কোটি সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা ও ৭৬,৭৭৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
নাগরিকদের জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিজিটাল সেন্টার ২০১৪ সালে ই-গভর্নমেন্ট ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU)-এর ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।