মানসিক হাসপাতালে এএসপিকে নির্যাতন করে হত্যা!
রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসার জন্য সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমকে ভর্তি করতে নেওয়া হয়েছিল। তার পরিবারের লোকজন যখন ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন ততক্ষণে হাসপাতালের লোকজন তাকে ভিতরে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পরেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
এরপরে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে মাইন্ড এইড হাসপাতালের ভিতরে তাকে চেপে ধরে ফ্লোরে ফেলে হাত বাঁধা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার থেকে থানায় একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। হাসপাতালের ৬ থেকে ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাতে এ বিষয়ে কথা হয় আদাবর থানার (ইন্সপেক্টর অপারেশন) মো. ফারুক মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, ওই পুলিশ কর্মকর্তার মানসিক সমস্যার কারণে পরিবারের লোকজন তাকে সকালে ওই হাসপাতলে ভর্তি করাতে নিয়ে যায়। ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। সোমবার সাড়ে ১১টার সময় হাসপাতালে নেয়া হয়, আর ১২টার মধ্যে ওই হাসপাতালে তিনি মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পরপর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই হাসপাতালের ৬ থেকে ৭ জনকে আটক করেছে।
রাত ১২টার দিকে ওই কর্মকর্তা জানান, এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন। এটি একটি হত্যা মামলা হবে। ঘটনার সময় কার ভূমিকা কি ছিল সেটা বিবেচনা করে সেই মামলায় তাদের আসামি করা হবে। তবে সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে হাসপাতালের ভিতর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে চেপে ধরে কাপড় দিয়ে হাত বেধে রেখেছিল।
নিহত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা সর্বশেষ বরিশালে এসি ট্রাফিক ছিলেন। তার পরিবারের কাছ থেকে জানতে পেরেছি তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
এদিকে সোমবার বিকেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. তানভির হাসনাত রবিন।
রাতে ডা. তানভীরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সোমবার বিকালে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তার ভিসেরা সহ হার্ড ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরার মধ্যে ছিল লিভার, কিডনি ও স্টোমাক সেগুলো সবই পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে সেগুলোর পর্যালোচনা করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষকে মারধর করলে শরীরের উপরিভাগে যেসব আঘাত থাকার কথা, সে রকম কোনো আঘাত চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মিয়া বলেন, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রট ডেড’ অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই আনিসুলের মৃত্যু হয়েছিল। তবে ঘটনাটি আদাবর থানা এলাকায় পড়েছে। তবু আমাদের পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছে। তাই আমরাও ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। তাছাড়া হৃদরোগ হাসপাতালটি শেরেবাংলা নগর থানার আওতাধীন।
নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে আদাবর থানা পুলিশ। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। শুনেছি তাকে হাসপাতালে মারধর করা হয়েছে।