সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। অধিবেশনেকে সামনে রেখেই পুরো সংসদ ভবনে ছিল উৎসবের আমেজ। এরমধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা করেন।
সোমবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশন কক্ষে আসন নিয়েই উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান স্পিকার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন। এসময় তিনি কবি শামসুর রাহমানের ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে; সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে।’
পূর্ব নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ করোনা নেগেটিভ সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে আসন গ্রহণ করেন। তবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সিনিয়র কয়েকজন সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারী দলের বেশিরভাগ সদস্য কালো মুজিব কোর্ট পরে অধিবেশনে যোগ দেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৬টা ৭ মিনিটে সংসদ কক্ষে প্রবেশকালে বিউগলে রাষ্ট্রপতির আগমনি অর্কেস্ট্রা বেজে ওঠে। এরপর প্রথা অনুযায়ী জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যসহ অধিবেশন কক্ষে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানান। এরপর স্পিকারের ডান পাশে রাখা আসন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দেয়া দুর্লভ ভাষণ সংসদ কক্ষে দেখানো হয়। তখন পুরো অধিবেশনে নেমে আসে পিনপতন নিরবতা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ চলাকালে মাঝে মাঝেই হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান এমপিরা। ভাষণ শেষ হলে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দেন সংসদ সদস্যরা। এরপর ৬টা ৩৪ মিনিটে স্পিকারের বাম পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান এমপিরা। রাষ্ট্রপতি গণপরিষদ ও দেশের প্রথম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। বক্তৃতায় তার প্রতিফলন পাওয়া যায়। ভাষণ শেষে রাষ্ট্রপতিকে সংসদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থসমূহ উপহার দেন স্পিকার। পরে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি।
অধিবেশন ১৫ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। বিরতির সময়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরতি শেষে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের উপর আলোচনার জন্য ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা। ওই প্রস্তাবটি নিয়ে সংসদে আলোচনা করবেন সরকার ও বিরোধী দলের প্রায় ৬০ জন এমপি। টানা চার দিন আলোচনা শেষে আগামী বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গ্রহণ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে (মুজিববর্ষ-২০২০) স্মরণীয় করে রাখতে গত রোববার থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে।
অধিবেশনকে ঘিরে সংসদ ভবন এলাকা ছিলো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা। অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবনকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়।