মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে গেলেন দেবী
ষষ্ঠীতে বোধনের মধ্য দিয়ে বাবার বাড়ি মর্ত্যে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। দশমীতে বিসর্জনে আবার ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়ি কৈলাসে। ভক্তদের চোখের জলে শেষ হলো ৫ দিনের দুর্গোৎসব।
মায়ের আগমনে ভক্তদের মধ্যে যেমন আনন্দ কাজ করছিল, তেমনি তার চলে যাওয়ার দিনে তাদের মনে ছিল বিরহের সুর।
বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজা। তিন দিন বৃষ্টি-বাদল মণ্ডপে যেতে বাদ সাধলেও নবমী ও বিজয়া দশমীর দিন আবহাওয়া ছিল অনুকূল।
সোমবার শেষবারের মতো দেবীকে দেখতে রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলোতে ভক্তের ঢল নামে। পূজা শেষে দেবীর পায়ে অঞ্জলি দিয়ে প্রার্থনা করেন তারা।
ঢাকার মণ্ডপগুলোতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে শুরু হয় বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন। বেদনাবিধূর ওই বিদায়লগ্নে দেবীকে তেল, সিঁদুর ও পান দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
শাস্ত্র মতে, শাপলা, শালুক ও নানা উপচারে ভক্তরা মায়ের পূজা করেন। পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গা এসেছেন দোলায়। দোলায় আসার অর্থ ‘মড়ক’।
ধর্মীয় নেতারা বলছেন, দেবী এবার দোলায় আসায় পূজা বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারি পরিস্থিতি বজায় থাকার আশঙ্কা আছে। তবে মায়ের গমন হয়েছে গজে। এর ফল শুভ হয়। শাস্ত্র মতে, এর ফলে পৃথিবী শস্য শ্যামল হবে।
ঢাকায় ওয়াইজঘাট ছাড়াও বসিলা এলাকার তুরাগে এবং সবুজবাগ এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। দুপুরের পরপরই বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে ঘাটের পথে রওনা হন ভক্তরা। শঙ্খ আর উলুধ্বনির সঙ্গে চলে খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
প্রতিমা ঘাটে নেয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়।
বিসর্জন শেষে মন্দিরে শান্তির জল নিয়ে আসা হয়।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘মা চলে যাচ্ছেন। কিন্তু দেবী অতন্দ্র প্রহরীর মতো তার ভক্তদের সবসময় সকল প্রকার রোগ-শোক থেকে রক্ষা করবেন।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমাদের আয়োজন নিয়মে সীমাবদ্ধ ছিল। আমরা কোন শোভাযাত্রা বের করিনি। ছিল না রং খেলা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যেসব বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তা মেনেই আমরা সব মন্দিরগুলোতে বলে দিয়েছি যেন সেইভাবে বিসর্জন দেওয়া হয়। সবাই মোটামুটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিসর্জন দিয়েছে।’
পূজায় নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এবার চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলাম। পূজায় কোনো অঘটন ঘটেনি।’
তিনি জানান, নিয়ম মেনে সব মন্দিরগুলোকে বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে।
করোনা সতর্কতার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মায়ের ভোগের প্রসাদ ছাড়া খিচুড়ি বা এ জাতীয় প্রসাদ বিতরণ করা হয়নি। অনেকেই অঞ্জলি দিয়েছেন বাসায় বসে। তবে নবমী পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা ছিল।
সারা দেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে মণ্ডপের সংখ্যা ২৩২টি।