‘বাংলাবান্ধার সঙ্গে ৪ দেশের রেল যোগাযোগ চালু হবে’
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার সঙ্গে চার দেশের রেল যোগাযোগ চালু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে ‘বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর টেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ভেতর দিয়ে রেল সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ৮টি ইন্টারসেকশন পয়েন্ট পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পঞ্চগড় থেকে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালুর জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভবিষ্যতে বাংলাবান্ধার সঙ্গে ভারত নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ চালু হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হবে।
রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, একসময় ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন রেলপথ চালু ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রেলপথকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথকে আধুনিকীকরণসহ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে রেলকে জনগণের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি চালু করা হলো।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, জেলায় জেলায় রেললাইন যাবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল লাইন পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ট্রেন চলাচল দুদেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়নি উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, স্বল্প ভাড়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ সহজ করা হয়েছে। রেলের সেবা বাড়ানো হয়েছে। রেল ম্যাংগো এবং ক্যাটল ট্রেন চালু করেছে। ভবিষ্যতে এমন আরো অনেক নামেই ট্রেন চালু করা হবে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব সেলিম রেজা, পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোশারফ হোসেন জানান, বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটি পঞ্চগড় থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছাড়বে সকাল সাড়ে ৮টায়। ট্রেনটি রাজশাহী পৌঁছবে ৯ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৫টায়। আবার রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা শুরু করবে রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে। পঞ্চগড় পৌঁছবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে।
রাজশাহী থেকে শুক্রবার এবং পঞ্চগড় থেকে শনিবার ট্রেনটির সাপ্তাহিক চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি আরো জানান, ট্রেনটি পঞ্চগড়, কিসমত, রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, হিলি, পাঁচবিবি,জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আহসানগঞ্জ, মাধনগর, নাটোর, আব্দুলপুরসহ ২১টি স্টেশনে থামবে।
তিনি জানান, ট্রেনটির সুলভ শ্রেণির ভাড়া ১৭০ টাকা, শোভন ২৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ৩৩৫ টাকা, প্রথম শ্রেণির ৪৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি ৬৬৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৫৫৫ টাকা (ভ্যাট ব্যতীত), এসি ৬৬৫ টাকা (ভ্যাট ব্যতীত), এসি ৯৯৫ টাকা (ভ্যাট ও বেডিং চার্জ ব্যতীত) নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি “খ” শ্রেণির ট্রেন। এটি ৫০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন।
পঞ্চগড়সহ রংপুর বিভাগের ৮টি জেলা পূর্বে রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তাই পঞ্চগড়সহ এ এলাকার মানুষের সাথে রাজশাহী যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও রুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে যায়। পঞ্চগড়-রাজশাহী রেলপথে প্রথম রেলযোগাযোগ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন পঞ্চগড়ের সর্বস্তরের মানুষ।