স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক পিএস ওয়াহেদুরকে দুদকে তলব
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. জাহেদ মালেকের সাবেক পিএস ওয়াহেদুর রহমানকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বরগুনা জেলা পরিষদের সিইও হিসেবে কর্মরত এ সাবেক আমলাকে আগামী ১৪ অক্টোবর দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শামছুল আলমের সই করা পাঠানো পৃথক নোটিসে ওই ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক পিএস ওয়াহেদুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। অনৈতিক তৎবীরের মাধ্যমে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য দুর্নীতি করেছেন। নিয়োগ, টেন্ডার, বিভিন্ন কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব সেক্টরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেক্টরের ক্ষতিসাধন করেছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেনাকাটা, টেন্ডারসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এমন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এরই অংশ হিসেবে ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ১৩, ১২ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ আছে।
দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে দুদক। ২০১৯ সাল থেকে তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। ইতোমধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছাড়া আলোচিত গাড়িচালক মালেকসহ স্বাস্থ্য ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অঢেল সম্পদের খোঁজ পাওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় সংস্থাটি।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে ২০১৯ সাল থেকে আমরা একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করি। ইতোমধ্যে মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। তাদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি, তার স্ত্রী মিসেস রিফাত আক্তার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, তার স্ত্রী মিসেস কাজিদা আক্তার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মো. আবদুল মালেক, তার স্ত্রী মিসেস নার্গিস বেগম, গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান, তার স্ত্রী বিলকিস রহমান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স মোসা. রেহেনা আক্তার, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক মো. ইমদাদুল হক, তার স্ত্রী মো. উম্মে রুমানা ফেন্সী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুজ্জামান তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন, শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী মিসেস ফিরোজা বেগম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) কামরুল হাসান তার স্ত্রী ডা. উম্মে হাবিবা, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রধান (নন মেডিকেল) বর্তমানে বরিশালের পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ মো. আনোয়ার হোসেনসহ ৪৫ জনের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। এদের মধ্যেই ১২ জনকেই আগামী ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।