মেগা ৮ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা
নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের ঝুঁকিতে রয়েছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা ৮ প্রকল্প। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হলেও কাজ চলেছে ধীরগতিতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা। যথাসময়ে শেষ করতে অনেক কাজই বাকি। ফলে মেয়াদ শেষে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এমন চিত্র।
এদিকে সম্প্রতি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা সভা হয়েছে। এতে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণে অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়।
ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৩৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ সময়ে গড় অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
অন্যদিকে গড়ে মেয়াদ কাল পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৭ বছর। প্রকল্পগুলোর শতভাগ কাজ শেষ করতে হলে এখনও গড়ে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ কাজ বাকি। এগুলো শেষ করতে আরও সময় লাগবে। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়বে ব্যয়ও- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, অবশ্যই মেগা প্রকল্পগুলো মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। কেননা করোনা মহামারীর বড় আঘাত লেগেছে। তবে এ করোনা পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘায়িত হয় তাহলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। এ সমস্যা তো শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের। এটা মেনে নিতেই হবে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো শেষ করতে যদি ব্যয় বৃদ্ধি পায় সেটি অযৌক্তিক হবে না। এটা বুঝতে হবে। করোনার আগের বাস্তবায়ন গতি আর এখনকার গতি এক নয়। ছোট ছোট ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে মেগা প্রকল্প সর্বত্রই এ প্রভাব পড়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অবশ্যই এসব প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির ঝুঁকিতে আছে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বৃদ্ধি হতে পারে। এক্ষেত্রে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ করার স্বার্থে টাকা যা লাগবে তা দিতেই হবে। তবে কথা হচ্ছে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো শুরুতেই খুঁজে পাওয়া গেলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতো না। যেনতেন ভাবে শুধু প্রকল্প নিলেই তো হবে না। প্রকল্পগুলো ফাস্টট্র্যাকে যুক্ত করার মানে তো এই নয়, যে শুধুু মেয়াদ ও টাকা বাড়ানো হবে। ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি, মানসম্মত বাস্তবায়ন এবং জবাবদিহিতা সেরকমই হওয়া উচিত।
পদ্মা সেতু : এ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। সে হিসাবে গত ১২ বছর ৭ মাসে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগামী বছর জুনে মেয়াদ শেষ হল আগামী ১০ মাসে বাস্তবায়ন করতে হবে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরই মধ্যে করোনাসহ নানা কারণে নতুনভাবে মেয়াদ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : এটির বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। গত ৪ বছরে অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। প্রকল্পটির শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে আগামী ৫ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ৭১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : ২০০৯ সালের জুলাই থেকে রামপাল প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনেই শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত ১১ বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এখনও প্রকল্পটির কাজ বাকি রয়েছে ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মেট্রোরেল : ২০১২ সালের জুলাই থেকে এর বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। কিন্তু গত ৮ বছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগামী ৪ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ৪৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৫ সালের জুলাই থেকে। শেষ হবে ২০২১ সালের জুনে। শুরু থেকে গত ৫ বছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৭১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শতভাগ কাজ শেষ করতে হলে আগামী ১ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। শুরু থেকে গত সাড়ে ৪ বছরে অগ্রগতি হয়েছে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। শতভাগ কাজ শেষ করতে হলে আগামী ৪ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ : এ প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে। আর শেষ হবে ২০২২ সালের জুনে। শুরু থেকে গত ১০ বছরে অগ্রগতি হয়েছে ৪২ শতাংশ। শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে আগামী ২ বছরে বাস্তবায়ন করতে হবে ৫৮ শতাংশ।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র : এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৪ সালের জুলাই থেকে। শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। শুরু থেকে গত ৬ বছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী ৩ বছরে শতভাগ কাজ শেষ করতে হলে আরও ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে।