ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২০:৩১

৩০০ টাকায় বিকাশের ক্যাশ-ইন রেজিস্টারের পাতা কেনে হ্যাকাররা

অনলাইন ডেস্ক
৩০০ টাকায় বিকাশের ক্যাশ-ইন রেজিস্টারের পাতা কেনে হ্যাকাররা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিকাশ হ্যাকার চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।

ডিবি জানায়, আসামিরা তাদের সোর্সের কাছ থেকে বিকাশ এজেন্টের ক্যাশ-ইন রেজিস্টারের পাতা কিনে যাদের মোবাইলে টাকা গেছে তাদের ফোন দিয়ে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে টাকা হাতিয়ে নিত।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন বিভিন্ন বিকাশের দোকানে ক্যাশ-ইন রেজিস্টারের নম্বর লেখা পাতার ছবি সুকৌশলে তুলতেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন গ্রামে থাকা মূল হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। নম্বর লেখা প্রতিটি পাতা ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতেন। মূল হ্যাকাররা নম্বর দেখে বিকাশের দোকানদার সেজে ভিকটিমকে বিভিন্ন অপারেটরের সিম থেকে কল দিতেন এবং বলতেন তার দোকান থেকে ভুলে কিছু টাকা ভিকটিমের নম্বরে চলে গেছে। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং বিকাশ অফিস থেকে তাকে কল দেয়া হবে।

ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম ফোনের কিছুক্ষণ পর মূল হ্যাকার বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশ অফিসের নাম করে বিকাশ সেন্টারের মূল নম্বরের সদৃশ্য নম্বর থেকে ভিকটিমকে কল দিতেন। ভিকটিমের নম্বরে তখন +০১৬২৪৭ থেকে কল আসে। কল সেন্টারের ওই ব্যক্তি ভিকটিমের নম্বরে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠাতেন এবং কৌশলে প্রেরিত ওটিপি ভিকটিমের কাছে জানতে চায়। ভিকটিম প্রতারিত হয়ে তার কাছে প্রেরিত ওটিপি এবং পিন নম্বর বলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিম অনেক সময় পিন নম্বর বলতে না চাইলে হ্যাকাররা ভিকটিমকে একটি অঙ্ক করার জন্য বলতেন এবং অঙ্ক করার ছলে ভিকটিমের কাছ থেকে সুকৌশলে পিন নম্বর জেনে নিতেন (যেমন-আপনার পিন নম্বরের সঙ্গে ১০০ যোগ করলে কত হয়?)। ওটিপি এবং পিন জানার পর হ্যাকাররা ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন। ভিকটিমের অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর হ্যাকাররা ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে পাঠিয়ে দিয়ে মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে ক্যাশ আউট করে নিতেন।

যে দোকান থেকে ক্যাশ আউট করা হতো তাকে প্রতি ১০ হাজারে ১ হাজার টাকা দেয়া হতো। টাকা ক্যাশ আউট করার পর ওই ব্যক্তি পুনরায় হ্যাকারদের পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিতেন। এছাড়া প্রতারণার কাজে আইফোন ব্যবহার করতেন।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, হ্যাকার চক্র থেকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিকাশ এজেন্ট সেজে কেউ ফোন করে পিন নম্বর অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে না দেয়ার জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।

বিকাশের প্রতারণার ঘটনায় ভাটারা থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়। সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো রানা খান, মো. লিটন, মো. নয়ন শেখ, মো. টিটু মোল্লা, মো. সালমান মোল্লা, আকাশ শেখ, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. রহিম ও মো. তানজিল। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি আইফোনসহ ১০টি মোবাইল ফোন, ৩৭টি সিম ও একটি প্রোভক্স গাড়ি উদ্ধার করা হয়।

 

উপরে