যে কারণে এবার দুর্গার দেরি
বৃহস্পতিবার বাঙালি হিন্দুরা পালন করছে মহালয়া। এর মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।
আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগতমাতার আগমন বার্তা— এমন আগমন ধ্বনি শোনা গেলেও দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে আসছে মহালয়ার ৩৫ দিন পর।
এর কারণ খানিকটা ভাবার মতোই। বৃহস্পতিবার মহালয়া হলেও পঞ্জিকার হিসেবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা হবে না। পূজা হবে কার্তিক মাসে।
মল মাসে কী এমন বিপত্তি? কেন ভাদ্রর শেষদিন মহালয়া হয়ে গেলেও আশ্বিন পার করে কার্তিকে গিয়ে বাপের বাড়ি আসছে উমা?
শাস্ত্র মতে, মল মাসে কোনোরকম পূজা নয়। পুরোহিতদের কথায়, মল মাস হলো ‘মলিন মাস’। হিন্দি বলয়ে বলা হয় ‘অধিক মাস’। অর্থাৎ, অতিরিক্ত মাস।
পুরোহিতরা বলেন, তিথি নক্ষত্রের সূক্ষ্ম হিসাব মেলাতেই এই মাসের উদ্ভব। যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাদের কথায় প্রতি উনিশ বছর অন্তর আশ্বিন মাস মল মাস হয়। সেই হিসেবে এর আগে ২০০১ সালের আশ্বিন ছিল মল মাস। তারও আগে ১৯৮২ সালে। আর সেই বছরগুলোতে প্রতিবারই দুর্গাপূজা হয়েছিল কার্তিক মাসে। হিসাব মতো আগামী ২০৩৯ সালের আশ্বিন মাস ফের মল মাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু কী এমন হিসাব, যা মেলাতে একটা মাসে সব পুজো-শুভ কাজ বন্ধ রাখতে হয়? পণ্ডিতদের কথা মোতাবেক, সমস্ত পূজা হয় সূর্য-চন্দ্রের তিথির হিসেবে। সূর্য ও চাঁদের তিথিগত হিসাবটা আলাদা। সূর্যের এক মাস গড়ে ত্রিশ দিনে সম্পূর্ণ হয়। চাঁদের ক্ষেত্রে সময়টা লাগে সাতাশ থেকে সাড়ে উনত্রিশ দিন। ফলে প্রতি মাসেই কয়েক দিনের ফারাক থেকে যায়। যা বছর শেষে গড়ে এগারো দিনে গিয়ে দাঁড়ায়। চান্দ্রতিথি ও সৌরতিথির ফারাক নিয়ন্ত্রণে তাই আড়াই থেকে তিন বছর অন্তর একটি করে মাসকে মল মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, পৌষ মাস বাদে সবই মলমাস হতে পারে। প্রতি ১৯ বছর অন্তর এই মাসটা এসে পরে আশ্বিন মাসে। তাই তাকে মলমাসের ‘মর্যাদা’ দিতে গিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয় পূজা।
২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।