ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৪:০৬

জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, সব কারাগারে সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, সব কারাগারে সতর্কতা

অজ্ঞাত স্থান থেকে সম্প্রতি কারাগার থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ও মোবাইল ফোনে কারা কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সদস্যরা। এমন এক চিঠির প্রেক্ষিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধানের জন্য দেশের সকল কারাগারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল কারা কর্তৃপক্ষকে ১৮ দফা শর্তযুক্ত অতীব জরুরি চিঠি দিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

এরই প্রেক্ষিতে দেশের সকল কারাগারে যেকোনো প্রকার হামলা প্রতিহত করতে জেলারের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করেছে দেশের প্রতিটি কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় রাস্তায় কিংবা কারাভ্যন্তরে অবস্থান করা অবস্থায় যেকোনো সময়ই এসব জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এমন কথা চিঠিতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

লালমনিরহাট জেলা কারাগারের বন্দীকে ছিনিয়ে নেয়া হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ সারাদেশের সকল কারাগারে বন্দী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। কারাগার থেকে বন্দীকে ছিনিয়ে নেয়া বা কারাবন্দীদের পলায়ন রোধে কারাগারে আটক সকল প্রকার বন্দীর ওপর নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া যেসব কারাগারে, জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর মামলার আসামি, আইএসসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলার আসামি আটক রয়েছে সেসব কারাগারে তাদের চলাচল ও গতিবিধি নজরদারি করতে বলা হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু দুষ্কৃতকারী কারাগার থেকে বন্দী ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে ও টেলিফোন কলও করেছে। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বন্দী পলায়নসহ যেকোনো দুর্ঘটনা রোধ করতে তৎপর থাকা কারা কর্তৃপক্ষের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রধান ও অন্যতম দায়িত্ব।

চিঠিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি কিছু কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই সকল কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

১৮ দফা নির্দেশনায় প্রতিটি কারাগারে জেলারের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার, ১ জন প্রধান কারারক্ষী ও ৫ জন কারারক্ষীর নেতৃত্বে সর্বাবস্থায় দায়িত্ব পালনের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এ ফোর্স সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ বা দাঙ্গা দমনে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। তবে পূর্বে এসব সদস্যদের কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে এমন স্টাফদেরকে এ ফোর্সে না রাখতে বলা হয়েছে। সকল কারা কর্মকর্তা- কর্মচারীকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

কারাগারের আরপি গেটে বাধ্যতামূলকভাবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টরসহ কঠোরভাবে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রয়োজনে অভ্যাগতদের সবার পরিচয় জানতে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক সশস্ত্র সেন্ট্রির ডিউটির ব্যবস্থা করা, অস্ত্র ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজন হলে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের মহড়া দেয়া।

এছাড়া কারা সীমানায় বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ও নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধ করা, আরপি গেটসহ প্রধান গেটে কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিসি টিভির মনিটরিং করা। কারাগারের প্যারামিটার ওয়াল ও সীমানা দেয়াল সুরক্ষিত রাখা।

এ সকল দায়িত্ব পালনের জন্য সকল কারারক্ষীকে ব্যারাকে ও কারা এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারা গোয়েন্দা ইউনিটের সকল সদস্যকে সর্বদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে যে কোন দুর্ঘটনা রোধ করতে কারাগারের ভেতরে এলার্ম সিস্টেম ব্যবস্থা সচল রাখা ও যে সকল কারাগারে জেএমবি ও জঙ্গি আসামি আটক রয়েছে সেসব কারাগার কর্তৃপক্ষকে সর্বদা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কারাগারের যে কোন প্রকার ঝুঁকি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সঙ্গেই অবগত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠিতে এসব দায়িত্ব পালনে কোন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম অবহেলা পাওয়া গেলে ও তা প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সর্বাবস্থায় কারাবন্দীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব। কিন্তু কারা অধিদপ্তর থেকে কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য দেশের সকল কারাগারের মতো আমরাও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অধিদপ্তরের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কারাগারের ভেতরের সকল বন্দীর প্রতি কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। কারা সীমানায় পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছি। কোন বহিরাগতকে ও বাইরের কোন পরিবহনকে কারা সীমানায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। গেটের বাইরে ও ভেতরে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সকল কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হচ্ছে। সংবেদনশীল মামলার আসামিদের বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দার কাজের পাশাপাশি সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গেই কীভাবে প্রতিহত করা যায় সেজন্য যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

জেলার বলেন, গেটে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ সশস্ত্র কারারক্ষী দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। কারাবন্দীর নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের পক্ষ থেকে কারাগারের ভেতর থেকে যে কোন জঙ্গি ছিনতাই করা হবে এমন একটি চিঠি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছেছে ও এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে এমন হুমকিও প্রদান করেছে। সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের সকল কারাগারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এমন প্রেক্ষিতে আমরা দেশের প্রতিটি কারাগারে বন্দীর নিরাপত্তা রক্ষায় কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে গুরুত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন তা জানিয়ে ১৮ দফা শর্তসহ চিঠি প্রদান করেছি।

তিনি আরো বলেন, কারাগারের যেকোনো দুর্ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ করতে প্রতিটি কারাগারে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করেছি। কারাগারের জেলারের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার, একজন প্রধান কারারক্ষী ও ৫ জন কারারক্ষীর সমন্বয়ে এ ফোর্স কারাগারের ভেতরে বাইরে কীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণ করবেন। একই সঙ্গে যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করতে তাদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করাসহ সকল প্রকার মহড়া প্রদান করবেন।

এছাড়া যেসব কারাগারে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জেএমবি, আইএস কিংবা সংবেদনশীল মামলার আসামি আটক রয়েছেন সেসব কারাগারে তাদের গতিবিধি নজরদারি করতে বলা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশসহ সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যেকোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশিত দায়িত্ব পালনে কোন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম কোন অবহেলা পেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে দিনে দুপুরে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জঙ্গি মামলার তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তারা হচ্ছেন, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের (হাই সিকিউরিটি) আসামি রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১ এর সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ এবং কারাগারের পার্ট-২ এর মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন।

 

উপরে