রাজধানীসহ ২৬ জেলা রেড জোন পরিস্থিতিতে
সংক্রমণের নিম্নগতির সঙ্গে জীবনযাত্রায় জড়িত সব কিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো ঢাকাসহ দেশের ২৬টি জেলায় রেড জোনের মতো সংক্রমণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মিলেছে এমন তথ্য। সেই সঙ্গে এখনো ঢাকায় ঘুরছে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
দেশে করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত হওয়া তিন লাখ ৩৭ হাজার ৫২০ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে শনাক্ত হয় ৮৫ হাজার ৯৩৮ জন। মোট শনাক্তকৃতদের মধ্যে ৭১.৩ শতাংশ সুস্থ হয়ে গেছে। মারা গেছে ১.৪ শতাংশ। বাকি ২৭.৩ শতাংশ বা ৯১ হাজার ১৪৪ জন এখনো রোগী হিসেবেই রয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান অনুসারে এখন ঢাকায় পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি।
তবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, এখন ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পজিটিভ রোগী আগের মতোই মিরপুর এলাকায়। এ সংখ্যা এখন এক হাজার জনের কাছাকাছি। প্রতিদিন এখনো মিরপুরেই বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
আইইডিসিআরের গত শনিবারের হিসাবে ঢাকা মহানগরীর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২৭ জন শনাক্ত হয়েছিল মিরপুরে।
এরপর ১৫ জন শনাক্ত হয় রমনা, ১৪ জন করে গুলশান ও রামপুরা এলাকায়, ১১ জন ধানমণ্ডি, ১০ জন করে উত্তরা ও ভাটারায় শনাক্ত হয়। বাকি এলাকাগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা ১০-এর নিচে।
অন্যদিকে এলাকাভিত্তিক মোট শনাক্তকৃতদের মধ্যে গড়ে ২৭ শতাংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পজিটিভ রোগী ছিল মিরপুরে ৯০৯, উত্তরায় ৪৪২, ধানমণ্ডিতে ৩৭১, যাত্রবাড়ীতে ২৪৩, গুলশানে ২২৪, রামপুরায় ২২৫, খিলগাঁওয়ে ২২৩ ও মহাখালীতে ২১৭ জন।
একই হিসাব অনুসারে ঢাকা বাদে সারা দেশে পজিটিভ রোগী রয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার। ঢাকার পরেই এখনো পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও খুলনায় সর্বোচ্চ পজিটিভ রোগী রয়েছে। এসব হিসাবের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর রাখা জোনিং সূচকের তুলনা করলে এখনো ঢাকার অনেক এলাকা এবং ঢাকার বাইরের বেশ কিছু জেলা কার্যত অঘোষিত রেড জোন বা সংক্রমণের জন্য বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে।
এই বিশ্লেষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমি নিজেও আইইডিসিআরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখলাম ঢাকাসহ ২৬টি জেলা এখনো রেড জোনের উপযুক্ত, আর ২৫টি জেলা ইয়োলো জোনের এবং বাকিগুলো গ্রিন জোনের আওতায় পড়ে। যদিও এখন অফিশিয়ালি জোনিং সিস্টেম থেমে গেছে অজ্ঞাত কারণে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জোনিং পলিসি অনুসারে ঢাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পেছনের ১৪ দিনে যদি ৬০ জন পজিটিভ রোগী থাকে, আর ঢাকার বাইরে যদি প্রতি লাখে ১০ জন থাকে, তবেই তা রেড জোনের আওতায় পড়ে। আর প্রতি লাখে যদি তিনজনের নিচে আক্রান্ত থাকে তবে তা গ্রিন জোনের আওতায় পড়বে। মাঝের অংশ থাকে ইয়োলের আওতায়। ফলে আমরা বলতেই পারি, সংক্রমণ আগের তুলনায় কমে গেলেও বিপদ কিন্তু আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না।’
ড. মুশতাক বলেন, ‘আমাদের এখনো উচিত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা জরুরি।’