ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৯:৫৩

আইএসপি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে!

অনলাইন ডেস্ক
আইএসপি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে!

দেশে সাইবার হামলার আশঙ্কা কেটে গেলেও ব্যাংকগুলোর অনলাইন ব্যাংকিং ও এটিএম সেবা স্বাভাবিক হয়নি। বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে রাতের বেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে এসব সেবা। ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটিএম সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাই আগের মতোই মধ্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এটিএম সেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। সতর্কতা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।    

জানা যায়, দেশের তিনটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) নেটওয়ার্কে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপের ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যাংকের অনলাইনে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে গ্রুপটি। সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলো আইএসপি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার কারণে এখনো শঙ্কায় আছে। তবে যে তিনটি আইএসপি নেটওয়ার্কে অস্তিত্ব মিলেছে সেগুলো কোনো ব্যাংক ব্যবহার করছে কি না সেটি কেউ বলতে রাজি হচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হ্যাকারদের হামলার আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে কোনো সেবাই বন্ধ রাখার কথা বলা হয়নি। নিজ উদ্যোগেই সেবা বন্ধ কিংবা সীমিত করেছে ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইলে বা মেইলে কোনো ধরনের বার্তা দেওয়ার গুরুত্বও অনুভব করছে কোনো কোনো ব্যাংক। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। এ পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কেউ কেউ দিনের বেলায় নগদ টাকা তুলে রাখছেন। এসব সেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কত দিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ।         

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য আসে, ‘বিগল বয়েজ’ নামে উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালাতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আরোপ করা হয় বাড়তি সতর্কতা। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকেও ব্যাংকগুলোকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা পেয়ে ব্যাংকগুলো তাদের অনলাইন ব্যাংকিং সীমিত ও তদারকি জোরদার করে। রাতে ব্যাংকের এটিএম বুথ সেবা বন্ধ রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনও বন্ধ রেখেছে। কোনো কোনো ব্যাংক নিজ ব্যাংকের গ্রাহক ছাড়া অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ রেখেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও পস লেনদেনও সীমিত করেছে অনেক ব্যাংক। শুরুতে ৫-৬টি ব্যাংক সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও দিনে দিনে এ তালিকা বড় হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোকে কোনো সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিইনি। আমরা তাদের বলেছি, সাইবার হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপর যার যার দিক থেকে ব্যাংকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। কেউ এটিএম বন্ধ করেছে, কেউ লেনদেন সীমিত করেছে। আবার কেউ কার্ড সার্ভিস বন্ধ রেখেছে।’       

এদিকে গত মঙ্গলবার সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ড রেসপন্স টিম-সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ‘বিগল বয়েজ’ নামের যে হ্যাকার গ্রুপ দেশে সাইবার হামলার চেষ্টা করেছিল, তা ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন আর আতঙ্কের কিছু নেই। তবে শঙ্কা কাটা নিয়ে বিজিডি সার্ট থেকে ব্যাংকগুলোকে এখনো কোনো লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আইএসপি নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইবার দিয়ে যে কানেকটিভিটি, সেই ফাইবার যে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানেজ করে এ রকম চারটি প্রতিষ্ঠানের আইএসপি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুপারিশ করা আছে। এই আইএসপি নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাইরের জগতের কোনো যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা নেই। এর বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আইএসপি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে কি না সে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ দিতে পারেনি। 

এদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউর ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার এ ধরনের সতর্কতা জারি করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।  

জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, আর্থিক খাতে সাইবার হামলা নিয়ে সতকর্তা জারি করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ আসে। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।

 

 

উপরে