ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:১৯

ফারইস্ট লাইফে হাওয়া ১৪০০ কোটি

অনলাইন ডেস্ক
ফারইস্ট লাইফে হাওয়া ১৪০০ কোটি

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চার বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবে ভয়াবহ গরমিল দেখা গেছে। গত ৪ বছরে তাদের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়েও চলতি বছর ৬শ ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লাইফ ফান্ডে উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু উদ্বৃত্ত থাকা তো দূরের কথা, কোম্পানিটির আয় ও বিনিয়োগ ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা কমে গেছে। বিপুল এই টাকা কোথায় গেছে বিশেষ নিরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নিচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গত ৪ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোম্পানিটি (২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে) প্রিমিয়াম সংগহ ও বিনিয়োগ থেকে মোট আয় করে ৪ হাজার ৪শ’ ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা খাতে ও বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ মোট ব্যয় করে ৩ হাজার ৭৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত থাকে ৬শ’ ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা চলতি বছরের লাইফ ফান্ড।

এই হিসাবে কোম্পানিটির বিনিয়োগ বা সম্পদ বাড়ার কথা। অথচ আলোচ্য সময়ে আয় ও বিনিয়োগ থেকে কমে গেছে ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এফডিআর কমে গেছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি, ব্যাংকের নগদ টাকা কমে গেছে ৭০ কোটি, মোট বিনিয়োগ কমে গেছে ১৮০ কোটি।

জানা গেছে, লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বছরে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়াম থেকে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বাদ দিয়ে নেট প্রিমিয়াম হিসাব করা হয়। এর সঙ্গে যোগ করা হয় বিনিয়োগ থেকে আয়। এটাই কোম্পানির মোট আয়। এরপর সেখান থেকে কমিশন, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতের খরচ তথা ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া হয় বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ খরচ। যা মূলত মোট ব্যয়।

মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকে তাকে বলা হয় চলতি বছরের লাইফ ফান্ড। আবার চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের সঙ্গে বিগত বছরের লাইফ ফান্ডও যোগ হয়। চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের এই টাকাই বিনিয়োগ করা হয় বা স্থায়ী সম্পদ কেনা হয়।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানিটির এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ছিল ১ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। পরের বছর ১৫২ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এরপর আরো ২৯২ কোটি টাকা কমে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১১২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে এই স্থায়ী আমানত আরো ৭২৪ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৪০৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০১৫ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড ছিল ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। যা পরের বছর ৮৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। এরপর আরো ১২৮ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

তবে ২০১৮ সালে কোম্পানিটির এই লাইফ ফান্ড ৬ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে লাইফ ফান্ড বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা। অথচ আয়-ব্যয় বাদ দিয়ে ৩ বছরে চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ৬শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৬ সালে তা ৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা আবার ১২৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭শ ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তবে ২০১৮ সালে এসে তা আবার ২শ ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কমে গিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫শ ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। আর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের ব্যবধানে মোট বিনিয়োগ কমে ১৮০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই তথ্যটি সর্ম্পকে আমরা অবগত আছি। এই কোম্পানিটির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরপর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপরে