ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০২০ ১০:৫৮

গণপরিবহন: আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে সংশয়

অনলাইন ডেস্ক
গণপরিবহন: আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে সংশয়

মিনিবাসের আসন পূর্ণ করে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং করোনাকালের আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে হবে— এ তিন শর্ত পূরণ করে আসন পূর্ণ করে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু বর্ধিত ভাড়া বাতিল কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। শনিবার (২৯ আগস্ট) নিজ বাসভবন থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বাস-মিনিবাস চলাচলের এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা ঠিক, অনেক সময় মালিকরা মানতে চান না, আমরা মনিটর করব।’

করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব শর্ত দিয়ে বাস-মিনিবাসে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, মালিকরা তা মানেননি। এবার বর্ধিত ভাড়া বাতিলের বিষয়টি পরিবহন মালিকরা কার্যকর করবেন কি না, এ প্রশ্নও রয়েছে। এ নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর আগেই বাস মালিকরা বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছিলেন। তবু আমরা চেয়েছি আগে বর্ধিত ৬০ শতাংশ প্রত্যাহার করা হোক।’

যদিও বাস মালিকরা বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। রাজধানীতে বিভিন্ন বাস কম্পানি ভিন্ন ভিন্ন হারে ভাড়া আদায় করে। রাজধানীতে চলাচলকারী মিনিবাসে ভাড়ার কোনো তালিকা রাখা হয় না। বড় কিছু বাসে ভাড়ার তালিকা দেখা গেলেও বেশির ভাগ বাসেই তালিকা নেই।

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ সরকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। পরে ১ জুন থেকে শর্ত সাপেক্ষে গণপরিবহন চালু করা হয়। অর্ধেক আসন ফাঁকাসহ নানা শর্তে সীমিত আকারে গণপরিবহন চালু করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে, যাত্রী ওঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে এবং বাসের প্রতি ট্রিপে যাত্রী নামিয়ে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে বাস জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ওই সব শর্ত মানার প্রতিশ্রুতিতে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, যদিও ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দাবি ছিল মালিকদের।

করোনাকালে কিছুদিন পরিবহন মালিকরা শর্ত মানলেও ঈদুল আজহার আগে থেকে সব কিছু ভেঙে পড়ে। সরকারের দেওয়া কোনো শর্তই মানা হয়নি। তবে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া ঠিকই নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থার পর বিভিন্ন মহল থেকে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। গত ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আতিকুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. হাসিম উদ্দিন বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন। তার আগে ১১ আগস্ট যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তোলেন। ২৩ আগস্ট একই দাবিতে তিনি গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগস্ট বাস মালিক সমিতিগুলো বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ আগস্ট বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ, বাস মালিক সংগঠন ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বাস মালিকরা আসন পূর্ণ করে যাত্রী পরিবহনের শর্তে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার চান। ওই সময় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন না করা এবং মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে মন্ত্রিপরিষদে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের সুপারিশ পাঠায়। এই শর্তে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গণপরিবহন চালু হচ্ছে।

বাস মালিকরা নতুন শর্ত মানবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরাই বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি দিয়েছি। মালিক-শ্রমিক ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার হলে আমরা ও শ্রমিকরা নিত্যদিনের ঝগড়া থেকে রেহাই পাই।’

করোনার আগেও দেখা গেছে, ঢাকার মিরপুর থেকে সদরঘাট, জয়কালী মন্দির, মতিঝিলের দিকে যাওয়া প্রজাপতি, শিখর, দিশারীসহ বিভিন্ন পরিবহনে যাত্রী উঠলেই ২০ টাকা ভাড়া দাবি করা হয়, যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন। বাসে ভাড়ার তালিকা নেই। এখন বর্ধিত ভাড়া আসলে প্রত্যাহার হলো কি না, যাত্রীদের তা জানার উপায় নেই। এর আগেও দেখা গেছে, রাজধানীতে চলাচল করা বা দূরপাল্লার গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা যাত্রীদের জানানোর স্বার্থে কখনো গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় না।

এমন অবস্থায় আসলেই বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার কার্যকর হবে কি না, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা কার্যকর করতে বাধ্য করব। কারণ বিষয়টির সঙ্গে মালিক-শ্রমিক ও সরকার একমত।’

 

উপরে