ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়াচ্ছে অবৈধ বিদেশিরা
নানা কৌশলে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর প্রতারণাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত এক শ্রেণীর বিদেশি নাগরিকরা। স্বদেশী ও স্থানীয়রা মিলে গড়ে তুলছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা, অস্ত্র, সোনা ও মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রার কারবার, এটিএম কার্ড জালিয়াতিসহ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে ওইসব বিদেশিদের বিরুদ্ধে। আর এ সকল সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে টার্গেট করছে সহজ-সরল বাঙালি বিত্তশালী মানুষদের।
এদিকে গত এক বছরে বিভিন্ন অপরাধে শতাধিক বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া বর্তমানে ৫ শতাধিক বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। যাদের মধ্যে আফ্রিকানদের সংখ্যাই সাড়ে ৪শ-এরও বেশি বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, রামপুরা, বনশ্রী, ধানমণ্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করছে কয়েক হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক (যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে)। তারা খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী বা পর্যটক পরিচয়ে দিনের পর দিন এদেশে অবস্থান করছে এবং ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নানা অপরাধে জড়িত কিছু অবৈধ বিদেশিকে ধরা হলেও চক্রগুলোর অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, দেশে কতজন অবৈধ বিদেশি নাগরিক আছে, এমনকি কে কত দিন ধরে এদেশে অবস্থান করছে এই পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। তবে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। ফুটবলার, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, ছাত্র ও পর্যটক হিসেবে তারা দেশে আসে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যায়নি।
৬ আগস্ট রাজধানীর কাফরুল ও পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার নাইজেরিয়াসহ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। ২১ জুলাই ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পল্লবীর একটি বাসা থেকে বাংলাদেশি ভুয়া নারী কাস্টমস কর্মকর্তা ও ১২ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। জুনে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ১৮ নাইজেরিয়ান ও দুই বাংলাদেশিসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ২৫ আগস্ট মঙ্গলবার রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকার কাউলা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে চার বিদেশীকে (নাইজেরিয়ান ও ঘানা) নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি টিম। এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন নারী সেনা কর্মকর্তার ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে মিলিয়ন ডলারের গিফট দেয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতকারী একটি আন্তর্জাতিক চক্রের ১৫ নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদী ভিসায় আসা আফ্রিকানদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অপরাধ চক্রে জড়িত এমন চক্রে প্রতারণার শিকারদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও এত বছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এবিষয়ে সিআইডি এসবি’র সাথে আলোচনা করবে। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ এসবি’র অধীনে।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, বিদেশিরা এদেশে বৈধভাবে আসলেও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই মূলত তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শুধু বাংলাদেশ নয় এসব আফ্রিকানরা ভারত, সিঙ্গাপুর ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে মার্চেন্ডাইজিংসহ বিভিন্ন ব্যবসা করতে এসে অপরাধ করে চলেছে। তাদের অপরাধের ধরন এমন যে, কেউ ভিকটিভ হওয়া ছাড়া জানার উপায় নেই। বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকের বিশ্বাস এমন যে বিদেশিরা প্রতারণা করতে পারে না। যার কারণে কেউ তাদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে আইনের আশ্রয় নিলেই কেবল জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে তাদের অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমের সচেতনতার পাশাপাশি যেসব বাড়ি মালিক বা দেশীয় নাগরিক তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন তাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। বিদেশিদের বাসা ভাড়া দেয়ার সময় বৈধ কাগজপত্র যাচাই করা গেলে অবৈধভাবে এদেশে অবস্থান রোধ করা সম্ভব হবে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার আরো বলেন, প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত এসব নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে ৭ জনের পাসপোর্ট নেই। আর একজন স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছে। ভিসার মেয়াদ না থাকলেও তারা দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশে আসার পরপরই তারা পাসপোর্ট ফেলে দেয় বলেও জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি। এর আগে, গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নাইজেরিয়া ও ঘানার চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের পর নানা প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিকভাবে প্রতারণা করে আসছিলো বলে জানায় সিআইডি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে এলে আসামিরা নিজেদের শিক্ষার্থী ও ফুটবলার হিসেবে দাবি করেন।