ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০২০ ২৩:৪৬

অবৈধ সম্পদ অর্জন: স্ত্রীসহ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক
অবৈধ সম্পদ অর্জন: স্ত্রীসহ ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রণব কুমার জানান, মামলার এজাহারে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে ওসি প্রদীপ তার স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে অনুসন্ধানে দুদক তথ্য পেয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনপূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাতসারে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনপূর্বক ওই অবৈধ সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করে ভোগদখলে রাখে।

এ অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ধারা, ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ,২০১২ এর ৪ ( ২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় চট্টগ্রামে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দীনের আদালত এজাহারটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইনসাফুর রহামান সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দায়েরকৃত মামলায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান আসামি ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং আসামি করা হয়েছে। মোট ২৮ জন আসামির মধ্যে ২৭ জনই পুলিশের সদস্য। অন্যজন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নূরুল আমিন।

এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ৪ জুলাই টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানসহ একদল পুলিশ হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মৃত সুলতান আহমদ প্রকাশ বাদশার পুত্র সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই জাহেদ হোসেনকে বাড়ির অদূরে রাস্তা থেকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাদের ছাড়িয়ে আনতে ফাঁড়িতে যান মামলার বাদী (মা) গুল চেহের। কিন্তু তাদের ছেড়ে দিতে সম্মত হলেও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান। এক পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকায় উভয়ের মধ্যে রফা হয়। পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে ওই দিন তিন লাখ টাকা সরাসরি হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানের হাতে দেন বাদী গুলে চেহের। বাকি দুই লাখ পরদিন মশিউর রহমানের কথামতো তার পাঠানো বাহক ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নুরুল আমিনকে দেন।

বাদী এজাহারে আরও জানান, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণ করার পর ৬ জুলাই দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহেদ হোসেনকে একটি মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়। ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে এনে সাদ্দাম হোসেন ও অন্য একজনকে গুলি করে পুলিশ। এতে গুরুতর আহত হয় সাদ্দাম হোসেন। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বাদী গুল চেহের এজাহারে দাবি করেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও মামলার ৩নং আসামি আরিফুর রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে অন্য আসামিরা সবাই যোগসাজশ করে সাদ্দাম হোসেনকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। সাদ্দামকে মারার কিছুদিন আগে তাদের বাবা সুলতান আহমদ প্রকাশ বাদশাকেও পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

কিছুদিনের ব্যবধানে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বাদী গুল চেহের। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে পুলিশ। তাই মামলার আবেদন করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী গুল চেহের।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র‌্যাবকে। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার এ ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। এ মামলায় বর্তমানে তিনি রিমান্ডে আছেন।

উপরে