শ্রিংলার ঢাকা সফর, কী বলছে ভারতীয় গণমাধ্যম?
২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল বড়দিনে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পরদিন রাস্তার ধারে পত্রিকা সাজাচ্ছেন দুই হকার। এএফপি
শ্রিংলার সফরকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে যে, তিনি তিস্তার পানি ও বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করছেন
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার বাংলাদেশে দুই দিনের ঝটিকা সফরে উভয় দেশেই মানুষের কাছেই খুব আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।
শ্রিংলার সফরকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে যে, তিনি তিস্তার পানি ও বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমও দাবি করছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে নয়াদিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
যদিও, দু’দিনের সফরের শেষ দিনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তার ঢাকা সফরকে “অত্যন্ত সন্তোষজনক” বলে বর্ণনা করেছেন।
শ্রিংলার সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের বাংলা দৈনিক আজকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশে একটি বিমানবন্দর তৈরিতে ঢাকাকে সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছিল ভারত। কিন্তু সম্প্রতি চীন তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। এর পরে দিল্লি আর চুপ করে থাকতে পারেনি।”
“তিস্তা প্রকল্পে চীনের সাহায্য, শীঘ্রই ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মার্চের শেষ দিকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তারপর শ্রিংলা এই প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। তিনি আজ দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করবেন। লকডাউনের পর শেখ হাসিনাও প্রথমবারের মতো কোনও বিদেশি অতিথির সাথে বৈঠক করবেন।”
অপর একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা “হাসিনার সঙ্গে হঠাৎ বৈঠকে বিদেশসচিব” শিরোনামে লিখেছে, শ্রিংলা দু’দিনের আকস্মিক সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
“দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দিল্লির ‘বিশেষ বার্তা’ নিয়ে এসেছেন বিদেশসচিব” ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের এই উদ্বৃতি দিয়েছে পত্রিকাটি।
জি নিউজ শিরোনামে বলা হয়, “ঢাকা সফরে বিদেশ সচিব, তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন শেখ হাসিনার সাথে”।
বহু ভাষার জনপ্রিয় এই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে, “তিস্তার জল বন্টন নিয়ে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। এরই মধ্যে, বেইজিং সম্প্রতি তিস্তা সেচ প্রকল্পে ঢাকার জন্য বিপুল পরিমাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এ ধরনের পরিবেশে তড়িঘড়ি সফর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির এক আভাস পেতে।”
“চীনের তিস্তা পরিকল্পনা: বিদেশসচিব আজ বাংলাদেশ সফর করতে পারেন” শিরোনাম ছিল ইংরেজি ভাষার দৈনিক দ্য হিন্দু।
পত্রিকাটির লিখেছে, “তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীন থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাবে, যা ভারতের সাথে পানি ভাগাভাগির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।”
শিরোনামটি ইঙ্গিত দেয় যে, তিস্তা প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগকে লক্ষ্য করেই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন শ্রিংলা।
“চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিদেশসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেছেন”- শিরোনামে “এশিয়ান এইজ” লিখেছে, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে, বিশেষত প্রকল্পসমূহের তদারকি করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটি যৌথ পরামর্শক কমিশন গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দুই দেশ।”
নিউজ এইটিন লিখেছে, ভারত তার বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, যার প্রক্রিয়া হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক দূত শ্রিংলা দ্রুত সেখানে যান।
নয়াদিল্লি বিবেচনা করছে, “ভারতের প্রতিবেশীগুলোতে বিনিয়োগের জন্য চীনা ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তিস্তা নদীর সাথে সম্পর্কিত একটি প্রকল্পের জন্য চীনাদের সম্ভাব্য ঋণ তার সর্বশেষ ট্রিগার।'
“ভারত ও বাংলাদেশ আট বছর ধরে তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারছে না। চুক্তিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রধানমন্ত্রী মোদী উভয়ই থমকে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে।”
“যদিও তিস্তা চুক্তি বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।”
এ বিষয়ে, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের বেশ কয়েকটি মিথ্যা ও নেতিবাচক খবর নিয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা ও দিল্লি।
“আমি তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,” বলেন মোমেন। “আমরা একমত হয়েছি যে, আমাদের মূলধারার যে মিডিয়া রয়েছে, আমাদের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা আরও ভাল, আমরা আপনার সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব,” মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন।'