ওসি প্রদীপসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা রিমান্ডে
বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে র্যাব। মঙ্গলবার সকালে তাদের রিমান্ডে নেয় পুলিশের এই এলিট ফোর্সটি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ তিনজনকে রিমান্ডে নেয়ার তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের চার সদস্য ও সন্দেহভাজন তিন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। দক্ষ ও পেশাদারির মাধ্যমে এই মামলা তদন্ত করছে র্যাব। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া সিনহা হত্যা মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গতকাল প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অন্য চার পুলিশ সদস্য ও তিন সাক্ষীদের আগেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছিল তদন্ত কমিটি।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দু’জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও ২ নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। এ দু’জন ছাড়া মামলায় আরো সাত পুলিশ সদস্যকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। পরে ওই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা র্যাব আরো তিনজনকে আসামি করে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে। মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ- এই তিন আসামি ঘটনার পর পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয়ভাবে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেছিলেন বলে জানা যায়। পরদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন প্রদীপসহ সাত আসামি। টুটুল ও মোস্তফা পলাতক রয়েছেন।
ওইদিন দুই দফা শুনানি শেষে তিন কর্মকর্তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এর কয়েকদিন পর বাকি চার পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে দেন আদালত। আদালতের নির্দেশের পর ওসি প্রদীপ, এসআই লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তবে বারবারই পিছিয়ে যায় রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া। অবশেষে তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রিমান্ডে নেয় র্যাব।
এদিকে ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্টকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন শিপ্রা দেবনাথ। নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের সহযোগী ও রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ নিজেই গতকাল একাধিক গণমাধ্যমে কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর রাতে এসে আমাদের কটেজ থেকে পুলিশ আমাদের দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ক্যামেরা, লেন্স, তিনটি হার্ডড্রাইভ এবং আমাদের ফোন ডিভাইস সব নিয়ে যায়। জব্দ তালিকায় যার কোনোটির কোনো উল্লেখ নেই। জানি না, এখন কীভাবে বা কার কাছে ফেরত চাইব।
শিপ্রা বলেছেন, ‘আমাদের পার্সোনাল প্রোফাইল ও ডিভাইস থেকে বিভিন্ন ছবি চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল অফিসাররাই ফেসবুক ও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। আমার ব্যক্তি জীবনকে যারা অসহনীয় করে তুলেছেন বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরির মাধ্যমে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। একই সঙ্গে সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন শিপ্রা।