শেষ দিনের আশায় পশু ব্যবসায়ীরা
জমে উঠেছে রাজধানীর ১৮টি কোরবানির পশুর হাট। ছোট থেকে শুরু করে মাঝারি ও বিশালাকৃতির গরু উঠেছে এ সব হাটে। সেই সঙ্গে রয়েছে উট, দুম্বা, ছাগল। কোনো কোনো হাটে বৃহৎ আকৃতির গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা। সবগুলো হাটে প্রচুর গরু উঠেছে বিক্রেতারা দাম বেশি চাওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে বলছেন ক্রেতারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত তেমনভাবে ক্রেতা আগমন চোখে পড়ার মত নয়। যারা এসেছেন, তারাও দামদর বেশি শুনেই ফিরতি পথ ধরেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিক্রির পরিমাণ ছিল সামান্যই। যেহেতু সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই বৃহস্পতিবার থেকে ব্যবসা ভালো হতে পারে। আফতাবনগর কোরবানির পশুর হাটে এভাবেই শেষদিনের আশায় দিন গুনছেন কুষ্টিয়ার এক গরুর ব্যাপারী। শুধু এই ব্যাপারী নয় রাজধানীর লালবাগ, মোহাম্মদপুর ও গাবতলির পশুর হাট ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। হতাশায় কোরবানি পশুর বিক্রেতা ও হাট ইজারাদাররা। পুরান ঢাকার এক নম্বর হাট লালবাগ বেড়ীবাঁধে সিরাজগঞ্জের মোতাহার উদ্দিন জানান, তিনি ৯টি গরু এনেছেন। এখনও একটিও বিক্রি করতে না পারলেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যে তার সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা বলছেন, ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি আছে। এখনো যদি ক্রেতাদের মধ্যে কোরবানির পশু কেনার প্রবণতা না থাকে, তাহলে হয়তো কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ গরু বিক্রি করতে পারবেন না তারা। তবে গতকাল হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসেছে। পশুর হাটে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদের এখনো কয়েকদিন বাকি আছে। তাই একটু সময় নিয়ে দেখেশুনে কোরবানির পশু কিনতে চান। আপাতত তাই দাম যাচাই করছেন তারা। ব্যাপারীরা দাম ছাড়তে চাচ্ছে না। তাছাড়া হাটে এখনো পর্যাপ্ত গরু না আসায় একেবারেই পছন্দ না হলে আরও দুএক দিন পরেই কিনতে চান বলে জানান তারা। গাবতলির হাটে বড় গরুর সংখ্যা বেশি। হাটটিতে উট, দুম্বা তোলা হয়েছে বিক্রির জন্য। দুবাই থেকে আনা দুম্বাগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত। তবে একজন বিক্রেতা জানালেন, ৭০ হাজার টাকায় একটি দুম্বা বিক্রি হয়েছে। বড় বড় গরু দেখতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ভিড় করছে। শাহজাহানপুর হাটে দেখা গেল সাদা একটি গরুর পাশে ভিড়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঝিনাইদহ থেকে নিয়ে আসা গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘সাদা পাহাড়’। ব্যাপারী মো. আজিজ মিয়া জানালেন, তিনি দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। গরুটি কিনলে ক্রেতা পাবেন অন্য একটি ছোট গরু ফ্রি। আজিজের দাবি ‘সাদা পাহাড়’ এর দাম উঠেছে ৬ লাখ টাকা।
শনিরআখড়ায় দেখা গেছে প্রচুর গরু। কিন্তু ক্রেতা কম। বৃষ্টির পানিতে হাটের মাখামাখি অবস্থা। মহানগরীর হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকায় বসা অস্থায়ী হাটে, গাবতলির স্থায়ী পশুর হাটে সরেজমিনে ঘুরে বোঝা যায় এখনো বিক্রি জমে উঠেনি। ক্রেতা সমাগম কেমন জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর বসিলা কোরবানির হাটের ইজারাদার শাহ-আলম জীবন বলেন, এখনও তেমনভাবে ক্রেতা সমাগম না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের পশু ছাড়ছেন না। বেশি লাভের আশায় সবাই চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়ার সাথে সাথে গরুর বিক্রি বাড়বে বলে আমি আশাবাদী। হাজারীবাগ হাটে ট্যানারি মোড়ের বাসিন্দা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মুজাফফর হোসেন বলেন, গরুর দাম বেশি চাচ্ছে। তাই আরও দুয়েকদিন দেখব। এখনো তো সময় আছে। অযাচিত দাম চাইলে কিনবো কেমন করে? দাম নিয়ে ক্রেতাদের এমন ‘আপত্তি’র সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা ব্যাপারী জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ১২টা গরু আনছি। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। দু’য়েকজন দাম জিজ্ঞাসা করছে। কাস্টমার তেমন নেই। সামান্য লাভ পেলেই বিক্রি করে দিব। কারণ এবার গরুর দাম অনেক কম। লাখ টাকার গরু দাম দিতে চায় ৬০ হাজার।