ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২০ ১০:১৬
সূত্র :

তীব্র অর্থ সংকটে সরকার

অনলাইন ডেস্ক
তীব্র অর্থ সংকটে সরকার

মহামারী রূপ নেওয়া কভিড-১৯ এর প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস প্রায় শেষ। রাজস্ব আদায়ে মারাত্মক এক ধাক্কা অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি দফতরগুলোর সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। একইভাবে সব ধরনের বিলাসী ব্যয় কর্তন করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্র্তাদের অপ্রয়োজনীয়, কম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই খরচ কমানোর এক নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত খাতের ৫০০ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের  জন্য থোক হিসেবে সংরক্ষিত ব্যয়ে বরাদ্দ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থবিভাগ। বিভিন্ন জায়গা থেকে আংশিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ। সূত্র জানায়, মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে খরচ করতে চাচ্ছে না সরকার। এজন্য উন্নয়ন এবং পরিচালন উভয় ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতি বেছে নিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয় বিলাসী ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও যাতায়াত খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। এজন্য বেশির ভাগ সভা অনলাইনে করা হচ্ছে। এতে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিও কম বলে মনে করে সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থবিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ইতিমধ্যে প্রণোদনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতির কারণেই সরকার ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে। ইতিমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় বন্ধ করেছে। একইভাবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে অর্থবিভাগ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এটি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা কম। এদিকে এনবিআরের রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব ধরনের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ভ্যাট আদায় বাড়াতে দোকানে ইসিআর মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কভিড-১৯ এর কারণে মানুষ ঘরে বসেই সেবা কিংবা পণ্য পেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এতে ই-কমার্সের বাজার বেড়েছে। অনলাইনে যেসব লেনদেন বা কেনাকটা হচ্ছে সেগুলোর বিষয়েও তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। যেমন কোনোভাবেই ভ্যাট ফাঁকি দিতে না পারে কোনো প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নতুন করদাতা অনুসন্ধানের কাজও শুরু হয়েছে এই মহামারীর মধ্যেই। অনলাইনেই এমন কাজ করছে এনবিআর।  

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে এটা তো নতুন নয়। তবে এবার নিশ্চয়ই অনেক বেশি পরিমাণে কমেছে। এর একটা ধাক্কা আসবে তা তো আগেই বোঝা গেছে। কেননা কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্বেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা বিরাজ করছে। এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। ফলে আমাদের এখানেও এর প্রভাব পড়েছে। এতে করে সরকারেরও আয় কমেছে। সরকার যে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে তার আগে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাহলে সরকারের অনেক অর্থের সাশ্রয় হবে। যা এই সংকটকালে কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, ব্যয় সংকোচন করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নিম্ন অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পে অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত করেছে। আর ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে না করলেই নয় এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে ও স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। পাশাপাশি ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের’ অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে হবে। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এ নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবে।

 

উপরে