প্রকল্পে গতি বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে সমন্বয়হীনতা দূর করে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল দুটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেক সভা শেষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
গতকাল একনেকের সভায় প্রায় ১ হাজার ১৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা খরচে ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানান।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে অগ্রগতি কম। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কম হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো রিভিউ করতেও বলেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়ক প্রশস্তকরণে ১০৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সেইসঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুই বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে সাড়ে সাত বছর। খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, রূপসা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে খুলনা শহরে প্রবেশের জন্য স্বল্পতম দূরত্বের সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও যানজট হ্রাস পাবে। শুরু থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যস্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। অগ্রগতি অনেক কম হলেও পাঁচ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসির সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করার পর একনেকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। মূলত এটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়েই ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি রিভিউ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনকে।
এদিকে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়া লাঙ্গলবন্দ-মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ব্যয় বাড়ছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে আড়াই বছর। ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ থেকে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, এ প্রকল্পে মূল কাজের বাইরে বাংলো বা ট্যুরিস্টদের জন্য হোটেল করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল কাজটাই করুন। অর্থাৎ রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ঘাটলা নির্মাণ। এ ছাড়া চায়ের দোকান যা প্রয়োজন হবে, তা বেসরকারিভাবে ব্যবসায়ীরা করবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প চলাকালে আইডিয়াওয়ালা এসে নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করেন। এটা আর করা যাবে না। এতে প্রকল্পের কাজের গতি কমে যায়। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় রাবার ড্যাম নির্মাণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রকল্পের অস্বাভাবিক খরচ যাচাই করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অস্বাভাবিক খরচ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের ভয়ঙ্কর লোকবলের অভাব আছে। যত লোক দরকার, এর অর্ধেকও নেই। তাই প্রকল্প প্রস্তাবের পাতায় পাতায় দেখা সম্ভব হয় না। তবে এ ধরনের অস্বাভাবিক খরচ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখব। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এগুলো হলো- গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ থেকে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ (জেড-১০৬১) (ভূমি অধিগ্রহণ) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কুমিল্লা জেলার তিতাস ও হোমনা উপজেলায় তিতাস নদী (লোয়ার তিতাস) পুনঃখনন’ প্রকল্প, ‘গাইবান্ধা জেলার সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোঘাট ও খানাবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা’ প্রকল্প ও ‘চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন) (বাপাউবো অংশ)’ প্রকল্প এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প।