পশু জবাইয়ের স্থান কমল, বর্জ্য সরাতে ব্যাপক প্রস্তুতি

আসন্ন কোরবানির ঈদে পশু জবাইয়ের স্থান কমাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ দুই করপোরেশন ৬৪৫ স্থান থেকে কমিয়ে এবার নির্ধারণ করল ৩৫৬টি। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংকটে এবার পশু জবাই কম হবে এই বিবেচনা থেকে নির্ধারিত স্থানগুলো কমানো হলো। এছাড়া কোরবানির পশু জবাইয়ের পর বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন ২০ হাজারেরও বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে থাকবে পর্যাপ্ত ভ্যান, ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাকালীন জনসমাগম এড়াতে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না করে ভিজিট করবেন মেয়র। একইসঙ্গে থাকবে হটলাইন সেবা চালু। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বর্জ্য অপসারণে সব ধরণের প্রস্তুতি রেখেছে সংস্থা দুটি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এবার ডিএসসিসির নিয়মিত ৫ হাজার ২৪১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কাজ করবে অতিরিক্ত ১ হাজার ২৫২ জন। সেই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (পিসিএইচপি) কাজ করবে ৩ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর তাদের কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৬০০টি ভ্যান, প্রায় ৩ শতাধিক ট্রাক। ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কাজ করবেন তারা। এছাড়া ‘প্রায় ১০ হাজারের মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রস্তুত রয়েছে আমাদের। গত বছর আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হয়েছিলাম। এবারো সে প্রত্যাশা করছি। সে লক্ষেই সব প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার বর্জ্য রাখার ব্যাগ, ১ হাজার ৮০০টি স্যাভলন, ১ হাজার ৪০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসসিসির আওতাধীন নির্ধারিত ১০০টি স্থানে কোরবানি দিতে নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হবে। সচেতনতার বিষয়ে এবার কাউন্সিলরাও মাঠে থাকবেন।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লা হারুন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদের বর্জ্য অপসরাণ করতে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। গত বছরের মতো এবারো ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হব আশা করছি। পশু জবাইয়ের স্থান কেন কমানো হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন সংকটে এবারের ঈদে কোরবানির সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কম হবে বলে ধারণা করছি। সে ধারণা থেকে এবার পশু জবাইয়ের স্থান কমানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমীন জানান, হাটে গরু বিক্রি শেষ হওয়ার পরে সেখানে অনেক কাদা থাকে, বাঁশ থাকে, খড় থাকে, গোবর থাকে সব কিছুই আমরা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করব। এছাড়া কোরবানি ঈদের দিন-দুপুর থেকে আমরা বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করব এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হবে আমরা আশা করছি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও কোরবানির ঈদে বর্জ্য অপসারণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, দ্রুতসময়ে বর্জ্য অপসারণের জন্য আমাদের নিজস্ব লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের পাশাপাশি আমরা আউটসোর্সিং করেছি এবার। ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দুই দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক ও খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যান নিয়োজিত করা হবে। কোরবানির পশুর বর্জ্যে যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে জবাইয়ের স্থানে ওয়াটার বাউজার দিয়ে তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রেকরণের ব্যবস্থা থাকছে এবার। এছাড়া ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে কোরবানির ২৫৬টি স্থান নির্ধারণ করা হয়ছে। বর্জ্য অপসারণে ১১ হাজার ৫০৮জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ১১ হাজার ৫০৮ জন লোক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য তৈরি করেছি। কোন কোন এলাকার কাজ বিকাল ৪টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। বর্জ্য অপসারণে হটলাইন চালু করা হবে।
কোরবানির ঈদে বর্জ্য অপসারণের সার্বিক বিষয়ে সাম্প্রতিক এক ভিডিও বার্তায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বরাবরের মতো এবারো ডিএনসিসি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে প্রস্তুত। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সব কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তাসহ আমি নিজেও মাঠে থাকব। তিনি নগরবাসীকে অনুরোধ করে বলেন, আপনারা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দেবেন, কোনো অবস্থাতেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলবেন না।