ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৭ জুলাই, ২০২০ ১৩:৪৫
সূত্র :

তোর বুদ্ধিতেই করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজ নিয়েছিলাম, সাবরিনাকে আরিফ

অনলাইন ডেস্ক
তোর বুদ্ধিতেই করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজ নিয়েছিলাম, সাবরিনাকে আরিফ

মিন্টো রোডের গোয়েন্দা দফতরে রিমান্ডে থাকা ডা. সাবরিনা এবং তার স্বামী আরিফ চৌধুরীর ঝগড়াঝাঁটিতে বিরক্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যখনই সাবরিনার সামনে আরিফকে নিয়ে আসা হচ্ছে, তখনই একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছিলেন। তুমি থেকে একপর্যায়ে তুই তাকারিতে চলে যাচ্ছিল তাদের এই ঝগড়া। সাবরিনা যখন বলছিলেন, তুই আমার জীবন, ক্যারিয়ার, চাকরি-সব শেষ করে দিয়েছিস। তখন আরিফ বলেন, তোর বুদ্ধিতেই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কাজ নিয়েছিলাম। জেকেজির চেয়ারম্যান হয়ে তুইতো ব্যবসার টাকা আর বেতনও নিয়েছিস।

গোয়েন্দা  পুলিশের একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, যখনই তাদের কোনো তথ্য যাচাইয়ে মুখোমুখি করা হয়, তখনই দুজনে ঝগড়াঝাঁটি শুরু করে দেন। তাদের বারবার থামাতে হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির কথা আরিফ স্বীকার করেছে। সাবরিনাও জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি কবুল করেছেন। আজ শুক্রবার সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে প্রয়োজনে ফের রিমান্ডের আবেদনও করা হবে।

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা বলেছে, জেকেজি ও ওভাল গ্রুপের অনেকেই এই দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত। তবে তিনি আরিফ চৌধুরীকেই দোষারোপ করেছেন বারবার। তার দাবি এসব কারণে তিনি তাকে ডিভোর্সও দিয়েছেন। তবে আরিফ বলেছেন, সাবরিনার কারণে এই অপকর্মে জড়িয়েছেন তিনি। সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে নমুনা পরীক্ষার নামে জালজালিয়াতিতে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের অপকর্মে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাচিপের নেতাসহ এদের সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতজন। তারা জানতেন, সাবরিনা এবং আরিফের ওভাল গ্রুপ একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এরপরও স্বাস্থ্যের সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কাজ বাগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এসব সহযোগিতায় ওইসব কর্মকর্তাদের কী ধরনের স্বার্থ জড়িত ছিল, তা নিয়েও তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ।  গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৪ ও ১৫ জুলাই ওভাল গ্রুপের গুলশান অফিসে তল্লাশি চালিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান হিসেবে মাসে মাসে বেতন নিতেন। বেতনের স্লিপও পাওয়া গেছে। এরকম তিনটি বেতনের স্লিপ তাদের হাতে রয়েছে। জেকেজি থেকে সাবরিনা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে নিতেন।

সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় ইতিমধ্যে সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৩ জুন আরিফুলকে গ্রেফতার করার পর তার স্ত্রী সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয় গত ১২ জুলাই।

ডিবি পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের জাল জালিয়াতির বিষয়টি অনেকটা প্রমাণিত। আমাদের এখন মূল টার্গেট এভিডেন্স কালেক্ট (তথ্য-প্রমাণ) করা। যার ভিত্তি করে আমরা শক্তভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারি। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণগুলোকে শক্তভাবে উপস্থাপন করছি। তবে তারা নকল করোনার রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেননি।

গতকাল সাবরিনার তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার তাকে ফের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

এদিকে গতকাল বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, আরিফ ও সাবরিনা করোনাকে কেন্দ্র করে তাদের জেকেজি হেলথ কেয়ারের ভুয়া রিপোর্টের কথা স্বীকার করলেও কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সেটা বলেননি। কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে সেটি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা টাকা কোথায় রেখেছে তা খোঁজা হবে। ব্যাংকগুলো খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে সাবরিনাকে আবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র জানায়, অনুমোদনহীন জেকেজির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর নমুনা সংগ্রহের চুক্তি করে গত ১৬ এপ্রিল। জেকেজির এ সময় কোনো ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত ছিল না। চুক্তি করার দুই মাস পর গত ১৬ জুন জেকেজির ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। যার মালিক জেবুন্নেসা রীমা। জেবুন্নেসা হলেন সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরীর বোন। তিনিও প্রতারণা মামলার আসামি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তির পর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী করোনার ভুয়া টেস্টের মাধ্যমে আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৭ হাজার মানুষের নুমনা সংগ্রহ করে ১৫ হাজার ৪৬০টি জাল সনদ দিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

 

উপরে