বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন সাহেদ
প্রতারক জগতের মাফিয়া ডন শাহেদের প্রতারণার জাল ছিল সর্বত্র। কোনো প্রটোকলেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাতারে না পড়লেও প্রতারণার মাধ্যমে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ নিয়মিত ব্যবহার করতেন তিনি। বেশ কয়েকবার এই লাউঞ্জ ব্যবহার করে তিনি বিদেশে যান বলে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার হাতে তথ্য এসেছে। এ ছাড়া তিনি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও চলাচলের সময় ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে। তার ওই লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতি নেই এই বিষয়টি সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে জানালে বিভিন্ন রকম হুমকি দিতেন শাহেদ। তার সঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে তাদের সরাসরি ফোন দিতেন। কখনও লাউড স্পিকারে কথা বলতেন। এতে ভয় পেয়ে কর্মকর্তারা আর ঝামেলায় যেতেন না।
ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশের নিয়ম হচ্ছে নির্ধারিত যাত্রী এবং পরিবারের ২ সদস্য ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু, সেখানে কোনো নিয়মের বালাই ছিল না তার ক্ষেত্রে। তার সঙ্গে আরো অনেকে সেখানে যেতেন। দেহ ও লাগেজ তল্লাশি করলে তিনি চেঁচামেচি করতেন। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শাহেদ গত ২০শে নভেম্বর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরে গেছেন। চলতি বছরে তিনি ৬ বার বিদেশে গেছেন। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ব্যবহার করতেন। অবৈধভাবে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার মদত আছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন খুলনা অঞ্চলের ক্ষমতাসীন দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। শাহেদ এখনো পলাতক আছেন। তাকে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে কার প্ররোচনায় তিনি ওই ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেছেন তা জানা যাবে। গত ৭ই জুলাই রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভুয়া করোনা পরীক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতারণার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
শাহেদের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম তৌহিদুল আহসান গতকাল সেই জাতীয় দৈনিককে জানান, প্রটোকলের বাইরে কাউকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। তবে যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ থাকে তাহলে তাকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে র্যাব শাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। ওই পাসপোর্টে দেখা গেছে, তিনি ৩টি দেশ বেশি ভ্রমণ করেছেন। সেগুলো হলো- থাইল্যান্ড, ভারত ও সিঙ্গাপুর। একটি নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১৮ই মার্চ রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে যান। ওই বছরের ১২ই এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে যান। সূত্র জানায়, এছাড়াও তিনি ২০১৯ সালের ৮ই মে রাত ১ টা ১৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে থাইএয়ার ওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে যান। গত বছরের ৬ই জুন রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুর গেছেন। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪শে আগস্ট সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে যান তিনি। এছাড়াও গত বছরের ২০শে নভেম্বর সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। সূত্র: মানবজমিন