বগুড়ায় সাহাদারা মান্নান, যশোরে শাহীন চাকলাদার জয়ী
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের উপ-নির্বাচন এবং যশোর-৬ কেশবপুর আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই দুই প্রার্থী বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন।
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাদারা মান্নান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমততুল্লাহ ইন্তাজ ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ২১৮ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোকছেদুল আলম লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৯৬৯।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাতে রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মাহাবুব আলম শাহ বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও সংবিধান রক্ষা ছিল জরুরি। তাই সিইসি’র ভাষায় ‘বাধ্য হয়ে আয়োজন করা’ বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়েছে যদিও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আগেই নির্বাচনের মাঠ ছাড়ায় ভোটারদের এই উপস্থিতি নিয়েও খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না সরকারি দলের প্রার্থী কিংবা নির্বাচন কমিশন। কারণ, দুই শতাংশ ভোট হলেও এ নির্বাচন বৈধ হবে তার ঘোষণা সিইসি দিয়েছিলেন আগেই। তারপরও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের ১২৩ কেন্দ্রগুলোতে ভোট হয়েছে, এসেও ছিলেন যৎসামান্য ভোটার।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে শুরু করেন। এতে কেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে উল্লেখযোগ্য ভোটার নজরে আসেনি।
বগুড়া-১ আসনে সংসদ উপ-নির্বাচনে এমপি পদে এবার ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যক্ষ মোকছেদুল আলম (লাঙল), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির মো. রনি (বাঘ), খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী প্রভাষক নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক)।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় ২৯ মার্চ। করোনার কারণে সেই তারিখে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে আবারও তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ১৮০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার নিয়ম থাকায় ১৪ জুলাই ভোটগ্রহণ করা হয় বগুড়া-১ আসনে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৭৭ হাজার ৩৫২ জন এবং সোনাতলা উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৬ জন। বন্যা ও করোনার মাঝে সাংবিধানিক কারণে ভোট হলেও স্বাস্থ্যসেবা মেনে ভোটগ্রহণ হয়। বগুড়া-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩০ হাজার ৯১৮ জন।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় যশোর-৬ কেশবপুর আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, শাহীন চাকলাদার নৌকা প্রতীকে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৬শ‘৬৮ ভোট। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ ধানের শীষ প্রতীকে ২ হাজার ১২ ভোট পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে মঙ্গলবার এই আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রাতে ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার বজলুর রশীদ জানান, যশোর-৬ কেশবপুর আসনে মোট ভোটার সংখ্যা - ২ লক্ষ ৩ হাজার ১৮। এর মধ্যে মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৭ ভোট। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ ভোট। ভোট পড়েছে ৬৩.৫৭ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুজনিত কারণে গত ২১ জানুয়ারি শূন্য ঘোষণা হয় এ আসনটি। এ আসনে উপ-নির্বাচন দেয়া হলে প্রার্থী হন আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ ও জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ২১ মার্চ স্থগিত করা হয় ভোটগ্রহণের তারিখ। পরবর্তীতে ১৪ জুলাই ভোটগ্রহণের তারিখ পুনঃঘোষণার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানালেও জোর প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিন চাকলাদার ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব।