ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২০ ১২:৪৪
সূত্র :

কে এই আজম খান

অনলাইন ডেস্ক
কে এই আজম খান

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভার এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী ও মানব পাচার চক্রের হোতা আজম খানের। কয়েক বছর আগেও ‘নুন আনতে পানতা ফুরাত’ যে পরিবারের, তারা এখন এলাকার বড় ধনী, বড় দানবীর। থাকেন বিলাসবহুল বাড়িতে। চড়েন দামি গাড়িতে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়েছে তাদের অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক উত্থান। যে উত্থানকাহিনি শুনে ‘চক্ষু চড়কগাছ’ হবে যে কারও।

জানা যায়, মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আজম খানের অর্থনৈতিক অবস্থা এক সময় খুব খারাপ থাকলেও, আমিরাতের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে তার পরিচিতি তৈরি হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখন তাকে সবাই আজম খান নামে চিনলেও তিনি খান বংশের কেউ নন। বিদেশে মানব পাচার শুরু করার পর নিজেই নামের শেষে খান উপাধী যুক্ত করেন। গ্রেফতার হওয়া আজমের অন্তত তিনটি নামের হদিস পাওয়া গেছে। এলাকার লোকে তাকে আজম ছাড়াও মোজাহের ওরফে আজিম উদ্দিন ওরফে ডন আজিম নামে চেনে। তার পিতার নাম মাহবুল আলম ও মায়ের নাম সবিল খাতুন। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি পৌরসভার খেরু মুহুরীর বাড়িতে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আজম খান লেখাপড়ায় প্রাইমারির গি  পেরোতে পারেননি। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার রাজনীতির হাতেখড়ি হয় ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে। ফটিকছড়িতে যখন শিবিরের রাজত্ব চলত, তখন ওই এলাকার দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকে তার হাতে খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১০ সালের শুরুর দিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানের মুখে এলাকাছাড়া হন আজম। পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচের দেশ আবর আমিরাতে। সেখানে থাকা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডারদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নেমে পড়েন নারী পাচারে। অল্প সময়ের মধ্যেই কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যান হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আজম। নামের সঙ্গে যুক্ত করেন খান উপাধী। মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেন হাতে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। যে পরিবারে এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরাত, তারাই এলাকায় বনে যান দানবীর। পৌরসভার খেরু মুহুরীর বাড়িতে তৈরি করেন বিলাসবহুল বহুতল ভবন। চলাচলে ব্যবহার করেন দামি গাড়ি।

আমিরাতে আজম খানের সাম্রাজ্য : দেশ থেকে আমিরাতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয় নেন আজম খান। এরপর দেরা দুবাইয়ের একটি ডান্সবারে চাকরি করেন কিছু দিন। একপর্যায়ে আমিরাতের এক প্রভাবশালী নেতার সহায়তায় শুরু করেন নারী পাচার। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয় ইউসুফ, ডন রাশেদ, কায়েদ ওরফে ইকবাল এবং শিবলী নামে চার বাংলাদেশি প্রবাসী। তাদের সিন্ডিকেট সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেরা দুবাই, ফজিরা এবং রাস আল খাইমায় গড়ে তোলেন কমপক্ষে ১০টি ডান্সবার ও হোটেল। যদিও সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আজম খান ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স বার, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের সন্ধান দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমিরাতের একাধিক বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটি নেতা বলেন, আজম খান জামায়াত-শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হলেও বর্তমানে তার ওঠাবসা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে। মানব পাচারের এই সিন্ডিকেট ভালো বেতনের টোপ দিয়ে বাংলাদেশি নারীদের আমিরাতে নিয়ে আসে। এর পর তাদের পাসপোর্ট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট কেড়ে নিয়ে বাধ্য করা হয় ডান্সবারে চাকরি করতে। আবার অনেক নারীকে আমিরাতে আনার পর ১৫ থেকে ২০ হাজার দেরহামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিক্রি হওয়া এসব নারীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

উপরে