ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:৩৬

মিরপুরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিতে ৩৩ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মিরপুরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিতে ৩৩ নেতা

ঢাকার বৃহত্তর মিরপুর এলাকার বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৩৩ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজদের স্থলে তাদের অভিষেক হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে।

তাদের চাঁদাবাজি, দখলদারির  ফলে একদিকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, পাশাপাশি ওইসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার সাধারণ মানুষের মাঝেও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক মামুন হাসানের সহযোগীরা তার স্ত্রী ডলি হাসানের ছত্রছায়ায় রাজধানীর কাফরুল ও মিরপুর এলাকার ফুটপাত দখল, ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, বাড়ি দখলসহ চাঁদাবাজি করছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য আহসান উল্লাহ চৌধুরি হাসান কাফরুলের ইব্রাহিমপুর থেকে মিরপুর-১০ নম্বরের প্রতিটি জায়গায় ব্যবসা দখল, দোকানপাট দখল ও স্কুলগুলোতে চাঁদাবাজি করছে। এছাড়া জায়গা-জমিও দখল করছে তার সহযোগীরা।

কাফরুল থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান রাব্বি মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সহযোগী। তিনি কাফরুল, কচুক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট, ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেদারছে চাঁদাবাজি করছেন।

কাফরুল থানা যুবদলের সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম বাবু শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীমের সহযোগিতায় ওই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজিতে জড়িত। বাবু ৫ টি অস্ত্র মামলায় ৭ বছর কারাভোগের পর  সম্প্রতি মুক্তি পান।

কাফরুল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল হক আকরাম যুবলীগের সন্ত্রাসী ডিস ব্যবসায়ী মাহবুবের সম্পূর্ণ ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এছাড়া তার বাহিনী মিরপুর ও কাফরুলের বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।

কাফরুল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির দেওয়ান জনিও শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সহযোগী। তিনিও জমি দখলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

কাফরুল থানা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএম মামুন বিল্লাহ ইব্রাহিমপুর শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় ব্যাপক দখলবাজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কাফরুল থানা বিএনপির সদস্য আশরাফ আলীর বিরুদ্ধেও পশ্চিম শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়াসহ কনস্ট্রাকশন সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ রয়েছে কাফরুল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. পারভেজ ওরফে কালা পারভেজের বিরুদ্ধে।

মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত হয়েছেন কাফরুল থানা যুবদলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন ওরফে সুরমা নুরু। রাজধানীর শামীম সরণি থেকে সব জায়গায় রয়েছে তার মাদকের সিন্ডিকেট।

কাফরুল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমান মন্টুর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষের জমি দখলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়েছে ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি।

এছাড়াও ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম ঈফাত, ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি কবির হোসেন মিল্টন, একই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জমাদ্দার আব্দুর রাজ্জাক, কাফরুল যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন খান, সেলিম মোল্লা, কাফরুল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন, থানা বিএনপির সদস্য খন্দকার মো. আলী শিবলি, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আতিকুর রহমান বশির, ফিরোজ আহমেদ, মনির হোসেন, ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম মামুন, যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফি, আব্বাস উদ্দিন আকতার, সেন্টু গাজী, রনি হাওলাদার, মো. পারভেজ ওরফে লম্বা পারভেজ, শাকিল মোল্লা, ছাত্রদল নেতা আবুল কালাম আজাদ নাসির, মিরপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফয়সাল, মিরপুর থানা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন দুলু ও যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতিনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখলবাজির ব্যাপক অভিযোগ পেয়েছে ওই সংস্থাটি।

সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশকিছু দিন এসব এলাকায় দখল, চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা গা-ঢাকা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তাদের জায়গাগুলোতে বিএনপির এই নেতারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।

এদিকে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের দখল ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, ‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এসব দখল, চাঁদাবাজিসহ যাবতীয় অবৈধ কর্মকাণ্ডে না জড়াতে দলীয় নেতাদের কড়াভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কেউ এসব বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়লে দল তদন্ত পূর্ব তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। দলে দখলদার, চাঁদাবাজদের কোনো ঠাঁই হবে না।

উপরে