ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৮ অক্টোবর, ২০২০ ১৩:৪৬

রাতে আসর বসতো আশিক টাওয়ারে

অনলাইন ডেস্ক
রাতে আসর বসতো আশিক টাওয়ারে

রুদ্র মিজান: রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো ফাঁকা হতে থাকে। কমতে থাকে ভিড়। কোলাহল থেমে যায়। কিন্তু চকবাজারের মদিনা আশিক টাওয়ারের আসর শুরু হতো রাত ১১টা থেকেই। একের পর এক বিলাসবহুল গাড়ি থামতো সেখানে। ব্যবসায়ী, তরুণ রাজনীতিবিদদের সরব উপস্থিতি ছিল ওই ভবনে। টাওয়ারের এই আড্ডায় অংশ নিতেন বিভিন্ন বয়সের নারীরাও। চিৎকার, বিকট শব্দে গান, আতশবাজির শব্দ শোনা যেতো রাতভর।

শোনা যেতো গুলির শব্দও। নাচে, গানে আসরে অংশগ্রহণকারীরা বুঁদ হয়ে থাকতেন মাদকে। ভোর পর্যন্ত চকবাজারের ওই এলাকা মাতিয়ে রাখতো মদিনা আশিক টাওয়ারের আসর। এই আসরের মধ্যমণি ইরফান সেলিম। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম ও তার ঘনিষ্ঠদের খুশি করতে সব ধরনের আয়োজন করতেন তার দেহরক্ষীরা। হাজী সেলিমের ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আশিক সেলিমের নামে এই টাওয়ার। ইরফানের ‘চাঁন সওদাগর দাদাবাড়ি’র গলি থেকে বের হয়ে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে বহুতল মদিনা আশিক টাওয়ার।

আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আতশবাজি ও শটগানের গুলির শব্দে ঘুম হতো না অনেকের। কিন্তু আতঙ্কে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। এমনকি এখনও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না কেউ। ইরফান টাওয়ারে যাবেন। সেখানে পা রাখার আগেই পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতো ইরফানের দেহরক্ষীরা। দেহরক্ষীসহ প্রায় ৪০ জন তার সেবায় নিয়োজিত ছিল। ইরফান সেলিম আসার পরপরই শুরু হতো আসর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই টাওয়ারের ১৬ তলায় হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা ডেভেলপারের অফিস। রয়েছে আরো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। ১৭ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের উপরের তলায় ইরফান সেলিমের কার্যালয়। এখানেই রাতভর আড্ডা দিতো ইরফান ও তার সঙ্গীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কক্ষের দুই পাশে বসার জন্য রাখা হয়েছে সোফা। রয়েছে একটি টেবিল ও চেয়ার। মাঝখানে ফাঁকা জায়গা। এটি ড্যান্স ফ্লোর। রাতভর দুই পাশে বসে ইরফান ও তার সঙ্গীরা নাচ উপভোগ করতো। হিন্দি ও পপ গানের সঙ্গে নাচ চলতো মদপান। আসরের অনেকেই আসক্ত ছিলেন ইয়াবায়। রাতে এখানে রঙ্গলীলা ঘটলেও দিনের বেলা ছিল ভিন্ন। দিনে এখানে ঘটতো নির্যাতনের ঘটনা। ইরফানের কথার অবাধ্য হলেই ধরে আনা হতো লোকজনকে। কান্নাকাটি করে, মাফ চেয়েও রেহাই পেতো না তারা। চাঁদা না দিলে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। এমনকি জমি দখলে বাধা দিলেও কপালে জুটতো করুণ পরিণতি। মুখে স্কচটেপ দিয়ে, হাত-পা বেঁধে বেদম পিটানো হতো। প্রায়ই হাত ধরে টেনে-হিঁচড়ে বিভিন্ন জনকে টাওয়ারের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন অনেকে। ওই টাওয়ারের নিরাপত্তা ছিল কঠোর। নাইট ভিশন বাইনোকুলার, ওয়াকিটকি, ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস ব্যবহার করতো ইরফান সেলিমের নিরাপত্তাকর্মীরা। ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার ওই টাওয়ার থেকে কয়েক ধরনের দড়ি, হাতুড়ি, রড, হাড়, হ্যান্ডকাফ, বেশ কয়েকটি গামছা, ধারালো অস্ত্র, মোটা বেতের লাঠি, হকিস্টিক, স্যাভলন ভর্তি বোতল, গ্যাসলাইটার, ফয়েল পেপার, একটি মোটা জিআই পাইপ, দু’টি স্কিন স্কচটেপ, ট্রাইপডসহ নেটওয়ার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস জব্দ করেছে র‌্যাব।

এমপি হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম নিজেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর। একদিকে এমপিপুত্র, অন্যদিকে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর জামাতা। এছাড়া সিমেন্ট, জাহাজসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে তার পরিবারের। ক্ষমতা ও বিপুল সম্পত্তির কারণেই বেপরোয়া ইরফান। র‌্যাব’র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মদিনা আশিক টাওয়ারে ছিল টর্চার সেল। এই ভবনে অনেক অপকর্ম হতো। বেশকিছু আলামতও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। সূত্র: মানবজমিন।

 

উপরে