ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৬:০৬

বাড্ডায় ভবনের ছাদে গাঁজা চাষ

অনলাইন ডেস্ক
বাড্ডায় ভবনের ছাদে গাঁজা চাষ

মঈনুল হোসেন মঈন (৪২) এবং খালেদ আক্তার মাহমুদ ওরফে মাসুম (৪৫)। তারা দুই ভাই। রাজধানীর বাড্ডায় পৈতৃক সূত্রে ছয়তলা বাড়ির মালিক তারা। তাদের পিতা ৯৫ বছর বয়সী বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন প্রায় অচল। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া নড়াচড়াও করতে পারেন না। এই সুযোগে পিতার গড়ে তোলা দক্ষিণ বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল রোডের ভূঁইয়া বাড়ি গলির জিপি-খ ১৪৭ নম্বর ভবনের ছাদে ৪ বছর ধরে গাঁজার চাষ করছিলেন দুই ভাই।

গাছ থেকে পাতা তুলে প্রক্রিয়া করে সরবরাহ করছিলেন কারওয়ান বাজার, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া তারা গাঁজার গাছও বিক্রি করে আসছিলেন। একেকটি গাছ বিক্রি করছিলেন ৮-১০ হাজার টাকায়। তারা নিজেরাও নেশাগ্রস্ত। মদ, গাঁজা ইয়াবা সব মাদকেই অভ্যস্ত তারা। গাঁজা গাছের পরিচর্যা করার সময় মঈন বুধবার রাতে ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। মাসুম পালিয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার মঈনকে আদালতে হাজির করে গাঁজা চাষের আদ্যোপান্ত জানতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন বাড্ডা থানা পুলিশ। রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বাড্ডা থানা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাড়ির মালিক বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা হোসেন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। সারাক্ষণ তার সময় কাটে বিছানাতেই। দীর্ঘদিন ধরেই অন্যের সহায়তা ছাড়া তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। মঈনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বাড্ডা থানার পুলিশ পরিদর্শক গাজী ইয়াসিন যুগান্তরকে বলেন, রাজশাহী এবং সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে বিজ এনে ছাদে গাঁজার চাষ করেন দুই ভাই। বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ছাদে ওঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ছাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুই ভাইয়ের কাছে। পুলিশ পরিদর্শক জানান, মঈনকে গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে ছাদে অভিযান চালিয়ে ৩০টি গাঁজার গাছ উদ্ধার করা হয়েছে। ফলের টবে মাটি দিয়ে সেখানে গাঁজার বিজ রোপণ করতেন তারা। নিবির পরিচর্যার মাধ্যমে সেখানে গাঁজার চাড়া বড় হয়। ছোটবেলায়ই দুই ভাই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন ছোটবেলা থেকেই সন্তানের প্রতি সতর্ক থাকলেও কোনো এক পর্যায়ে মঈন-মাসুম মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সন্তানদের টাকা-পয়সা দেয়ার ব্যাপারেও মাহমুদ হোসেন ছিলেন বেশ কঠোর। শেষ পর্যন্ত নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য তারা বাঁকা পথ ধরেন। গত কয়েক বছর আগে তারা গাঁজা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সম্প্রতি পাশের বাড়ির ছাদ থেকে এক ব্যক্তি গাঁজা চাষের বিষয়টি টের পান এবং পুলিশে খবর দেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঈনকে গ্রেফতার করতে পারলেও অপরজন পালিয়ে যান।

মামলার বাদী এসআই সৌমিত্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মধ্য বাড্ডা ফুটওভার ব্রিজের নিচে ডিউটিতে ছিলাম। এ সময় খবর পাই যে, আলাতুন্নেছা স্কুল রোডের ভূঁইয়া বাড়ি গলির একটি বাসার ছাদে নেশা জাতীয় দ্রব্যের গাছ চাষ হচ্ছে। মঈন এবং মাসুম নামের দুই ব্যক্তি এসব গাছের পরিচর্যা করেন। এসব গাছ এবং গাছের পাতা বিক্রি করে তারা অবৈধভাবে লাভবান হলেও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে বিষয়টি বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ আলমের অনুমতি চাই। তিনি অনুমতি দিলে ফোর্স নিয়ে ওই বাড়িতে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাসুম পালিয়ে যান। মঈন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করি। তাকে নিয়ে ছাদে অভিযান চালিয়ে গাঁজার গাছগুলো রাত ১১টার দিকে জব্দ করি। প্রাথমিকভাবে মঈন গাঁজা চাষ ও বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন। পরে বৃহস্পতিবার মঈন ও মাসুমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করি। এসআই সৌমিত্র সাহা জানান, গ্রেফতার মঈন পেনাল কোডের ৪১৩ নম্বর ধারায় করা একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ওই মামলাটি হয়েছিল বলে এসআই সৌমিত্র জানান।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একেএম নুরুল হক জানান, অভিযানের সময় আমি ছিলাম না। মামলার পর আমাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ না পাওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরই এ সংক্রান্ত সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

উপরে