ঢাকা, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩০ আগস্ট, ২০২০ ১৪:৫৬

চিড়িয়াখানার গেট থেকে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন শত শত দর্শনার্থী

অনলাইন ডেস্ক
চিড়িয়াখানার গেট থেকে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন শত শত দর্শনার্থী

পারিবারিক কাজে ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন মঈনুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে দেখেন সেটি বন্ধ। বাধ্য হয়েই হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হয়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে ফেরার পথে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে সন্তান দুটিকে ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে। কোথাও যেতে পারেনি। তাই ভেবেছিলাম ঢাকা ছাড়ার আগে ওদের চিড়িয়াখানায় ঘুরিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু এখানে এসে দেখি বন্ধ। তাই ফিরে যাচ্ছি।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত মার্চ মাসের ২০ তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীতে বিনোদনের অন্যতম স্থান জাতীয় চিড়িয়াখানা। আর প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা মিরপুরে চিড়িয়াখানার সামনে এসে বিফল হয়ে ফিরে যায়। বন্ধ থাকলেও দর্শনার্থীর আগমন থেমে নেই। প্রতিদিনই শত শত দর্শনার্থী এসে ফিরে যায়। চিড়িয়াখানার গেটে দায়িত্বরত আব্দুর রহমান জানালেন এমন তথ্য।

কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় গত পাঁচ মাসে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেও চিড়িয়াখানা খোলার সম্ভাবনা নেই। সে হিসেবে বন্ধ থাকার ছয় মাসে ছয় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেই সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজারে দাঁড়ায়। আর ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে মিরপুরে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায়। প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। সে হিসাবে দিনে গড়ে পাঁচ লাখ ও ঈদের ছুটিতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে ইজারাদারদের। করোনা-স্থবিরতায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত ১২ মাসের জন্য জাতীয় চিড়িয়াখানা ইজারা দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য শিখা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১২ কোটি টাকায় চিড়িয়াখানা ইজারা দেয় সরকার। প্রতিষ্ঠানটি চার কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করবে। কিন্তু করোনায় সরকার জাতীয় চিড়িয়াখানা বন্ধ ঘোষণা করায় শেষ তিন মাসের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি ইজারাদার।

এদিকে প্রতিবছর জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানা ইজারার চুক্তি কার্যকর হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ থাকায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস পুনরায় ইজারা দেওয়া হবে। এপ্রিল, মে ও জুন মাসের চুক্তীকৃত টাকা ওই তিন মাসের আয় থেকে ইজারাদার পরিশোধ করার কথা রয়েছে।

শিখা ট্রেডার্সের কর্ণধার বিমল চন্দ্র বলেন, ‘করোনায় বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ২০ জনের বেশি কর্মচারী নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েছি।’

এদিকে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন গেটের সামনে রাস্তার দুই পাশের শতাধিক দোকান মালিক। মূলত চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাই এসব দোকানের ক্রেতা। চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে রাখতে হয়েছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ওই সব দোকানের পাঁচ শতাধিক কর্মী।

প্রবেশ পথের পাশে ‘মায়ের দোয়া’ নামের খাবারের হোটেলের কর্মচারী ইয়াসিন বললেন, ‘আগে হোটেলে কাজ কইরা দিনে ২০০ টাকা পাইতাম। কিন্তু পাঁচ মাস ধইরা দোকান বন্ধ। অনেক কষ্ট কইরা কোনো রহমে বাঁইচা আছি।’

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. নূরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই চিড়িয়াখানা ইজারা বাবদ সরকার বছরে ১২ কোটি টাকা পায়। বন্ধ থাকার কারণে এখান থেকে সরকার প্রতি মাসে এক কোটি টাকা বঞ্চিত হয়েছে। নতুন করে ইজারা দেওয়ার কাজটি পুরো ছয় মাস পিছিয়ে যাচ্ছে। আর ইজারা চুক্তিভিত্তিক হলেও সরকারি নির্দেশনায় চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় ওই তিন মাস সময় তাদের নতুন করে দেওয়া হবে অথবা বকেয়া পড়া তিন মাসের টাকা নেওয়া হবে না।’

 

 

উপরে