মিরপুরে নাকের ডগায় চলছে বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব
রাজধানীর রূপনগরে ফুটপাত, সড়ক, সরকারি খাস জায়গা দখল করে গ্যারেজ বানিয়ে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে চুরি করা বিদ্যুৎ।
নাকের ডগায় এমন চুরির মহোৎসব হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে দেখা যায়, অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে গ্যারেজ। বিদ্যুতের খুঁটি তেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে।
মিরপুর ৬ পোড়া বস্তি, ট-ব্লক রহিম বস্তি, শিয়ালবাড়ী সাত্তার মাতব্বর বস্তি, রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৯ রোড। টিনশেড রোড-৬,৫, ইস্টার্ন হাউজিং, দুয়ারীপাড়া লতিফ মোল্লা প্রজেক্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক, বস্তি ও সরকারি খাস জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক গ্যারেজ। রূপনগর খালপাড় সংলগ্ন সরকারি খাস জায়গা দখল করে ২০টি গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। এসব গ্যারেজ চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা। এর পাশেই গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। এসব গ্যারেজে যেভাবে অবৈধ সংযোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। .স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, অটোরিকশা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে গ্যারেজও বাড়ছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ মালিকরা লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এ বিষয়ে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
২০১৯ সালে রূপনগর সেকশন-৬, ট-ব্লক এলাকায় বিদ্যুৎতের তারে জড়িয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ডেসকোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে গ্যারেজ মালিকরা অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমান অর্থ।
এলাকার বাসিন্দা মিথুন রেজা জানান, রূপনগরে খালপাড় সিটি কর্পোরেশন সড়ক তৈরি করে দিয়েছে জনগণের হাঁটা চলার করার জন্য। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে সড়কে গ্যারেজ বানিয়ে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্যারেজ মালিক বলেন, একটি রিকশার মধ্যে চারটি ব্যাটারি থাকে। বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এসব ব্যাটারি চার্জ দিতে গেলে পোষাবে না। গ্যারেজে রিকশা রাখা বাবদ প্রত্যেক মাসে পনেরশো টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। এর বেশি ভাড়া চাইলে কেউ গ্যারেজে রিকশা রাখবে না। তাই বাধ্য হয়েই অবৈধ সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ার জন্য ডেসকো বরাবর চিঠি লিখেছি। দু-একদিনের মধ্যেই সেই চিঠি ডেসকোতে পাঠাবো। আমার ওয়ার্ডের বস্তিবাসীদের বিদ্যুতের স্পট মিটার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। এ বিষয়ে তাদেরকে বেশ কয়েকবার বুঝিয়েছি। প্রয়োজনে আমি তাদের সহযোগিতা করব।
রূপনগর এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে বিদ্যুৎ চুরির মাধ্যমে অনেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপ্পী বলেন, যদি করো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যেই হোক। অন্যের অন্যায়ের বোঝা কেনো নিজের কাঁধে নেব? খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ চুরির বিষয় দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়। ডেসকোর কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন। তারা যদি আমাদের জানান, তখন আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
এ বিষয়ে ডেসকো রূপনগর জোনের সহকারী (অভিযোগ) সুপারভাইজার আবদুল আজিজ মিসির বাংলানিউজকে বলেন, রূপনগরে বিদ্যুৎ চুরির বিষয় ডেসকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। এই এলাকায় আগে যখন বস্তি ছিল তখন ম্যাজিস্ট্রেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। করোনার কারণে ডেসকোর ম্যাজিস্ট্রেট প্রোগ্রাম বন্ধ আছে। পুনরায় প্রোগ্রাম চালু হলে, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলার ব্যবস্থা করা হবে।