ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২০ ০৪:৫৮

রাজধানী থেকে সরানো হবে হাজার হাজার কুকুর

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানী থেকে সরানো হবে হাজার হাজার কুকুর

ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর শহরের বাইরের লোকালয়ে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের।

তিনি বলেন, 'কুকুরগুলোকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কুকুরগুলোকে মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তরিত করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কুকুরগুলো খাবারের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সেটা বাতিল করা হয়েছে। 

কুকুরগুলোকে স্থানান্তরিত করার পরও যাতে খাবারের সংকট তৈরি না হয় সেজন্য সেগুলোকে ঢাকার বাইরের জনপদ অর্থাৎ যেখানে মানুষের বসবাস রয়েছে তেমন কোনো এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তবে কোন কোন এলাকায় এগুলোকে নিয়ে যাওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কুকুর নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর ২০১৭ সালে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের সংখ্যা অন্তত এক লাখ।

ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা নাদিরা জাহান জানান, এর আগে কাঁঠালবাগান এলাকায় থাকতেন তিনি। সেখানে বাসায় ফেরার পথে কুকুরের কামড়ের ভয়ে বাসা পরিবর্তন করে পূর্বরাজাবাজার এলাকায় উঠেছেন তিনি। তবে এখানেও সেই একই অবস্থা।

এই এলাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার একাধিক রাস্তা থাকায় কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন তিনি। কুকুরের ভয়ে যাতায়াতের পথই পরিবর্তন করে নিয়েছেন তিনি।

ঢাকা শহরের রাস্তায় কুকুরের আনাগোনা প্রায়ই চোখে পড়ে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা, গলির মুখে বা যেখানে ময়লা জমে থাকে সেখানে একাধিক কুকুর দেখতে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নাছের বলেন, সম্প্রতি ঢাকা শহরের বেশকিছু এলাকার বাসিন্দার কাছ থেকে কুকুর সম্পর্কিত নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনেকে বলছে যে, কুকুরে কামড়াচ্ছে, অনেকে বলছে বাসা থেকে বের হতে পারছি না, বাচ্চা-কাচ্চারা ভয় পাচ্ছে, আসলে নাগরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পে ত্রুটি দেখা দেয়ায় এদের বংশবৃদ্ধি হওয়ার কারণে ঢাকার রাস্তায় হঠাৎ করেই কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তবে এর কিছুটা অন্য চিত্র রাজধানীর মিরপুর এলাকার। সেখানকার বাসিন্দা ইশরাত জাহান বলেন, তার এলাকায় একাধিক কুকুর থাকলে সেখানকার বাসিন্দারা ভয় না পেয়ে উল্টো মাটির পাত্রে করে কুকুরকে খাবার দেয়।

এদিকে কুকুরগুলোকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছেন প্রাণী কল্যাণ নিয়ে কাজ করা আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, স্থানান্তর করলে আসলে সমস্যা কমবে না বরং আরও বাড়বে।

অ্যানিমেল কেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন আফজাল খান। তিনি বলেন, এত সংখ্যক কুকুরকে একসাথে কোনো একটি অঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হলে সেখানে অবশ্যই খাদ্য সংকট দেখা দেবে। মফস্বল বা গ্রাম্য এলাকায় যদি কুকুরগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই খাবারের সংকট হবে। কারণ শহরের মানুষদের মতো সেখানকার বাসিন্দারা কুকুরের প্রতি এতটা সংবেদনশীল নয়। খাবারের সংকট হওয়ার কারণে তখন কুকুরগুলো মানুষকে কামড়ানোর চেষ্টা করবে।  

এ ছাড়া কুকুর নিধন এবং স্থানান্তর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ বলেও জানান তিনি। এর পরিবর্তে কুকুরগুলোকে বন্ধ্যা করা এবং জলাতঙ্ক টিকা দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ২০১৪ সালেই ঢাকার সিটি করপোরেশন কুকর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে। পরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আলাদা করে ভ্যাক্সিন দেয়ার উদ্যোগ নেয়। 

তবে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০১৬ সালেই ঢাকায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের পর চিকিৎসা নিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

 

উপরে